পাবনা-৪

এক আসনে একই পরিবারের ৭ জনসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী ২৪

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৩, ০৪:৩৩ পিএম
আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, বশির আহমেদ বকুল, গালিবুর রহমান শরিফ, গোলাম মোস্তফা চান্না মণ্ডল, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাহজেবিন শিরিন পিয়া, সাকিবুর রহমান শরিফ কনক

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসন থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র ফরম সংগ্রহ করেছেন একই পরিবার থেকে ৭ জনসহ ২৪ মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জানা যায়, প্রয়াত সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পরিবার থেকেই মনোনয়নের আশায় ফরম তুলেছেন আপন তিন ভাই-বোন ও ভগ্নিপতিসহ ৪ জন। আর প্রয়াত মন্ত্রীর আত্মীয় আরও ৩ জন। এই মোট ৭ জন নৌকার মনোনয়ন চেয়েছেন। এক পরিবার থেকে এতজনের মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন প্রয়াত মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ, মেঝো ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ কনক, মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলবিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন পিয়া এবং জামাতা (পিয়ার স্বামী) ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিন্টু।

মনোনয়ন জমা দিয়েছেন প্রয়াত ভূমিমন্ত্রীর খালাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বশির আহমেদ বকুল, ফুফাতো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব ও ভগ্নিপতি (খালাতো বোনের স্বামী) উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা চান্না মণ্ডল।

উল্লেখিত সাতজন ছাড়াও এই আসনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন, বর্তমান সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ নেতা প্রকৌশলী আব্দুল আলিম, সাবেক এমপি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রবিউল আলম বুদু, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ্, সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম লিটন, আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন, ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা, ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নায়েব আলী বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন, সাবেক পিপি আক্তারুজ্জামান মুক্তা, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা তারা, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের কোষাধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন তুহিন, একই সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. সাহেদ ইমরান, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুসলিমা জাহান ময়না।

আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনটিতে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফলে এলাকায় ডিলুর পরিবারের ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়। ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এতে পরিবারটির প্রভাব আরও বেড়ে যায়।

২০২০ সালে শামসুর রহমান শরীফ ডিলু মারা যান। এরপর থেকে পৃথকভাবে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে উপনির্বাচনে শামসুর রহমান শরীফের স্ত্রী কামরুন্নাহার, দুই ছেলে, মেয়ে, জামাতাসহ পরিবারের সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। সেই থেকে পরিবারটি ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়। ফলে মনোনয়নবঞ্চিত হয় পরিবারটি। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু হাল ছাড়েনি প্রয়াত মন্ত্রীর পরিবার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশায় তারা পোস্টার-ব্যানার টাঙিয়ে ও মিছিল মিটিং করে প্রচার চালাতে থাকেন। বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দুই ভাই, তাদের বোন, ভগ্নিপতির পৃথক বিলবোর্ড টাঙানো। বিভিন্ন সভা সমাবেশ তারা আলাদাভাবে আয়োজন করেন। এবার তারা প্রয়াত মন্ত্রীর পরিবারের ৪ জন ও তাদের আত্মীয় ৩ জন সহ মোট ৭ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এ বিষয়ে প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মাহজেবিন শিরিন পিয়া বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের পরিবার সম্পর্কে সব জানেন। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে আমরা কাজ করবো।”

মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রয়াত ভূমিমন্ত্রীর মেঝো ছেলে সাকিবুর রহমান শরীফ কনক বলেন, “আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। যিনি জনগণের আস্থার জায়গা অর্জন করত পারবেন তিনি বিজয়ী হবেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।”

ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আওয়ামী লীগে এসেছি। ঈশ্বরদী পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। দলীয় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। নিজের পরিচয়েই আমার মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।”

এ বিষয়ে পাবনা-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। তাই দলীয় নেতাকর্মী যে কেউই দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন, এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নাই।”

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, “তারা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। তিন ভাইবোন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন। মনোনয়ন সবাই চাইতে পারেন।”