বরগুনার আমতলীর সদর ইউনিয়নের নাচনাপাড়া সিংখালী খালের ওপর নির্মিত ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে চার গ্রামের মানুষকে। এভাবে পারাপারে ঝুঁকি ছাড়াও বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। তাই একটি নতুন স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, এলাকাবাসীর উদ্যোগে ৬ বছর আগে সিংখালী খালের ওপর ১১০ ফুটের ওই কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। সাঁকোর উত্তর পাড়ে দক্ষিণ-পূর্ব আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হুমায়ারা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। দক্ষিণ পাড়ে পশ্চিম চিলা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা ও মরিচবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার অবস্থিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ব্যবহারে সাঁকোটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। লোকজন উঠলেই কাঁপতে থাকে। রেলিং, পাটাতনসহ বিভিন্ন জায়গার কাঠ নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে। ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়েই চলাচল করছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ মরিচবুনিয়া, সিংখালী, নাচনাপাড়া, দক্ষিণ আমতলী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় আবদুল খালেক হাওলাদার বলেন, “প্রতিদিন চার গ্রামের অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কাঠের ওই সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। এই দুর্ভোগ লাঘবে আমাদের জন্য স্থায়ীভাবে সরকারি উদ্যোগে একটি সেতু নির্মাণ করার দাবি করছি।”
দক্ষিণ পূর্ব আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিবা বলে, “প্রতিদিন আমাদের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসতে ও যেতে হচ্ছে। সেতুটি ভেঙে গেলে স্কুলে আসতে যেতে অনেক কষ্ট হবে।”
দক্ষিণ আমতলী গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চার গ্রামের সাধারণ মানুষদের ওই খাল দিয়ে পারাপারে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। আমরা গ্রামবাসী একটি কমিটি করে নিজেদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই খালের ওপর একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করি। সরকারিভাবে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হলেও আজ পর্যন্ত ওখানে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি।”
কাঠের সাঁকোটি নির্মাণকাজের একজন উদ্যোক্তা হিরণ মৃধা বলেন, “একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে ছিল এখানকার চার গ্রামের মানুষেরা। ৬ বছর আগে গ্রামবাসীর অর্থায়নে নাচনাপাড়া সিংখালী খালে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করি। নির্মাণের পর থেকে প্রতিবছর ওই কাঠের সাঁকো সংস্কার করে শিক্ষার্থীসহ আমরা গ্রামবাসী পারাপার হয়ে আসছি। বর্তমানে সাঁকোটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে যেকোনো মুহূর্তে এটি ভেঙে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দাবি সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক।”
আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, নিজ উদ্যোগে ওখানকার লোকজন নাচনাপাড়া সিংখালী খালের ওপর একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে। ওখানে যাতে একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে দ্রুত গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করব।”
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে কাঠের সাঁকোর জায়গায় লোহার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।