সংস্কারের অভাবে বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ১৪৭টি লোহার সেতু ও ৪২টি পাকা সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এর মধ্যে বেশ কিছু সেতু ভেঙে নদী ও খালে পড়ে আছে। ফলে এসব এলাকা দিয়ে চলাচল করতে ভোগান্তিতে আছে কয়েক লাখ মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বরগুনা জেলা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় হালকা যান চলাচল প্রকল্পের অধীনে কয়েক শ লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলার ২৮টি, বেতাগীতে ১৮টি, বামনায় ৪২টি, তালতলীতে ৭টি, আমতলীতে ২২টি এবং পাথরঘাটা উপজেলার ৩০টি লোহার সেতু ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নির্মাণাধীন বরগুনা সদরে ১৭টি, আমতলীতে ৯টি, তালতলী ৪টি, পাথরঘাটায় ৭টি ও বেতাগীতে ৫টি পাকা সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল, জাওয়াদ, ইয়াসসহ বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতিরিক্ত মালবোঝাই পরিবহন চলাচল করায় সেতুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুলো সেতুর হাতল, অ্যাঙ্গেলসহ অন্য মালামাল চুরিও হয়ে গেছে। ধসে পড়া কিছু সেতুর স্থানে স্থানীয়ভাবে বাঁশ ও সুপারিগাছ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করেছে স্থানীয়রা। তবে এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা।
বরগুনা সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়নের বিবেক চত্বর এলাকার লোহার সেতুটি দেবে ৬ বছর ধরে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা সুদেব বিশ্বাস বলেন, গত ৬ বছর ধরে সেতুর মাঝ বরাবর দেবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এই সেতু পুনর্নির্মাণ করা দরকার।
সদরের ভাড়ানি খালের আলিয়া মাদ্রাসা সড়কের পাকা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে ৩ বছর ধরে। আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মো. মৃদুল মাহবুব বলেন, পূর্ব বরগুনার সব মানুষ এই সেতুটি দিয়ে চলাচল করে। জিলা স্কুল, আলিয়া মাদ্রাসা, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করে। এই সেতু যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এলজিইডিকে জানানো হলে দায়সারাভাবে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই এ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম শেষ রেখেছে।
আমতলীতে সুগন্ধি খালের ওপর নির্মিত লোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুর মাঝ বরাবর স্ল্যাব ভেঙে গেছে ২০১৮ সালে। সেখানকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, এই সেতুটি কয়েক বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই।
চাওড়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়ে ২০২১ সালের জুন মাসে। হলদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল প্যাদা বলেন, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারও মানুষ পারাপার। সেতুটি এখন চলাচলে অনুপোযোগী। যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
মহিষডাঙ্গা এলাকার সেতুটি দুই বছর ধরে ভেঙে খালে পড়ে আছে। স্থানীয়রা মিলে ড্রামের ওপর কাঠ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মল্লিক বলেন, “আমার এলাকায় ৫টি সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে আছে। এসব সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। এ ছাড়া দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এলাকাসহ আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সেতু চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। সেতুগুলো নির্মাণের জন্য এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
এ বিষয়ে এলজিইডি বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, “মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরাও বসে নেই। এসব সেতু পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবভুক্ত করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও কয়েকবার এসব ব্রিজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। চলতি বছরের শেষের দিকে এসব ব্রিজের টেন্ডার আহ্বান করা হতে পারে।”