কোটি টাকার টমেটোর বাজারে হিমাগার স্থাপনের দাবি

বিজন কুমার, দিনাজপুর প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৩, ১২:১৭ পিএম

দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়া হাট থেকে শুরু করে মোস্তান বাজার পর্যন্ত বসে মৌসুমি টমেটোর বাজার।  স্থানীয়দের কাছে যে বাজার টমেটোর বাজার নামে পরিচিত। যে বাজারে আমদানি হয় স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত নাবি জাতের টমেটো। আর এই বাজারে প্রতিদিনই গড়ে টমেটো বিক্রি পরিমাণ প্রায় কোটি টাকার ওপরে। তবে হিমাগার না থাকায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা।

কথা হয় স্থানীয় কৃষক জ্যোতিষ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এবার ১ বিঘা ৫ কাঠা (৬০ শতাংশ) জমিতে টমেটোর আবাদ করছি। কাছেই বাজার হওয়ায় অনেক কৃষক এই সময় টমেটোর আবাদ করে। আলুর জন্য হিমাগার আছে। টমেটোর জন্য হিমাগার থাকাটা জরুরি। কারণ, এই বছর হয়তো সাময়িক লাভ আসবে। কিন্তু গত কয়েক বছর লাভের মুখ দেখতেই পাইনি। একবার তো মাত্র ৪০ টাকা মণ টমেটো বিক্রি করতে হয়েছে।”

এই কৃষক হিমাগারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “আপনি একটু ভেবে দেখেন। যে বছরগুলোতে আমাদের লোকসান হইছে, কিংবা যে বছরটাতে আমরা ৪০-৫০ টাকা মণ বিক্রি করছি, সে সময় যদি আমাদের এখানে হিমাগার থাকত, তবে আমরা হিমাগারে টমেটো রেখে পরে বিক্রি করতে পারতাম। টমেটো গাছ থেকে একবার ছিঁড়লে আর সেটাকে এক দিনের বেশি রাখা যায় না। কম পান আর বেশি পান, আপনাকে বিক্রি করতেই হবে।”  

জানা যায়, এই বাজারে টমেটো কিনতে প্রতিবছর জেলার বাইরে থেকে প্রায় ২৫০-৩০০ জন পাইকারি ক্রেতা আসেন। তারা টমেটো স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেন জেলার বাইরে। বর্তমানে এ বাজারে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। আর প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি। আর যেসব ট্রাকে টমেটো যাচ্ছে তার প্রতিটিতে প্রায় গড়ে টমেটো বোঝাই হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০টি ক্যারেট। এর বাইরে কিছু ছোট পিকআপও রয়েছে। অপর দিকে যেসব প্লাস্টিকের ক্যারেটে টমেটো বোঝাই করা হয় তার প্রতিটিতে রাখা যায় প্রায় ২৫ থেকে ২৬ কেজি পর্যন্ত টমেটো।

হিসাব বলছে, যদি টমেটোর প্রতি মণ বিক্রি হয় ৭০০ টাকা দরে। তাহলে প্রতিদিন ১ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭০০ টাকার টমেটো বিক্রি হয় এ বাজারে।

[53556]

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, ২০২১ ও ২২ অর্থবছরে জেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হয়েছে একই পরিমাণে। এর মধ্যে সদর উপজেলাতেই বেশি। আর গত দুই বছরে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল ৪৫ দশমিক ১১ মেট্রিক টন। এবারে উৎপাদন বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

মোহাম্মদ আলী নামে এক টমেটোচাষি বলেন, “টমেটো আবাদ করি ঠিকই। এবার টমেটো ৬০০ থেকে ৮০০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই টমেটো নিয়ে বেশি দর কষাকষি করা যায় না। যদি বিক্রি না হয় তবে আর বাড়িতে রাখার উপায় নাই। নষ্ট হয়ে যাবে টমেটো। আর রোগবালাই তো আছেই। গাছ মরা, টমেটো পচা। বিষ (কীটনাশক) তো সপ্তাহে সপ্তাহে ছিটাতে হয়। এত খরচ করেও লাভ হয় না। গত কয়েক বছর তো লাভের মুখ দেখি নাই। কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার থাকলে পাইকারের সঙ্গে দর কষাকষি করা যাবে।”

তাপস চন্দ্র দাস নামের আরেক কৃষক বলেন, “আগে ৫ থেকে ৭ বিঘা করে টমেটো আবাদ করতাম। কিন্তু এই সময়টাতে তো শিলা বৃষ্টি হয়। আবার রোগ বালাইতো আছেই। একবার সাড়ে ৬ বিঘা টমেটো আবাদ করে বিক্রি করছি ৩০-৪০ টাকা মণ। তার পরের বার আবাদ করছি বিক্রি হইছে মোটামুটি। কিন্তু লোকসান হয়, টেনশন বেশি। তাই আর আবাদ করি না, বাদ দিছি। তারপরে টমেটো রাখা যায় না একদিনের বেশি। হিমাগার স্থাপন করলে বেশি দিন থাকবে টমেটো।”

৪ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি ট্রাক বোঝাই হচ্ছে। এসব টমেটো কিনতে জেলার বাইরে থেকে ২৫০-৩০০ পাইকার আসে। এক ক্যারেটে প্রায় টমেটো ধরে ২৫ থেকে ২৬ কেজি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, “দিনাজপুরের উৎপাদিত টমেটো এই জেলার যেমন চাহিদা পূরণ করে, ঠিক একইভাবে বাইরের জেলাতেও পূরণ করে। জেলায় এ বছর প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। আবাদের পরিমাণ বাড়বে আমরা আশা করছি। বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা টমেটো লাভবান হচ্ছেন।”

দিনাজপুর সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, শেখপুরা ইউনিয়নের আশপাশে অনেক টমেটো আবাদ হয়। গাবুড়া বাজারের আশপাশে ৩ শতাংশ জমির ওপরে একটি হিমাগার স্থাপনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।”