রাসিক নির্বাচনে বিএনপির সাইদকে ঘিরে ‘রহস্য’

এম এম মামুন, রাজশাহী প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৩, ০১:১৬ পিএম

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে এবার মেয়র পদে অনেকটায় নিরুত্তাপহীন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এককথায় বলা যায়, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম মেয়র পদে একতরফা ভোট হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে কেন্দ্র করেই চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। ফলে হাতে যে কদিন সময় আছে, তাতে শেষ মুহূর্তে গিয়ে বিএনপির কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির নেতা এ নির্বাচনে এলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিটনকে তেমন বেগ পেতে হবে না বলেই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

এই অবস্থায় হঠাৎ মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নাম আসছে দুজনের। যাদের মধ্যে একজন হলেন মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ও রাজশাহী কলেজের সাবেক ভিপি সাইদ হাসান এবং অপরজন হলেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট।

তাদের মধ্যে সুইট নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সাইদ তার কথার মধ্যে রেখেছেন রহস্য। দলের মধ্যে সুবিধাবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত সাইদ ফের কোনো নতুন সুবধিা নিতে এ নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসছেন কি না, সেটি নিয়েও নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে রাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতা সাঈদ হাসান। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই।

এদিকে এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে রাসিক নির্বাচনে মেরয় পদে তিনজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন,
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন মুরশিদ আলম ফারুকী। তবে তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না বলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও হঠাৎ তৃতীয় সারির দুই নেতার নাম কিছুটা শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই ও সাবেক যুবদল নেতা সাইদ হাসান এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটের নামও। তাদের মধ্যে সাইদ হাসান বিএনপির আমলে রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এসে প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। দলের পেছনে সেই অর্থের কানাকড়িও খরচ করেননি বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি দলীয় মিছিল-মিটিংয়েও তাকে খোঁজে পাননি নেতাকর্মীরা। ফলে তাকে দলের নেতাকর্মী বলেন ‘সুবিধাবাদী’ নেতা। তিনিই হঠাৎ করে রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনার পরে দলের নেতাকর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তার পক্ষে দলের কেউ মাঠে নামবেন না বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

তবে সুইট সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দলের বাইরে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।”

সাইদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, “এখনো তো অনেক সময় আছে, সময় হলেই সবকিছু জানতে পারবেন। তখন সবকিছু বলব।”
সাইদের কথার মধ্যেও রয়ে গেছে রহস্যে ঘেরা। তিনি কি আদৌ নির্বাচনে করবেন, নাকি শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াবান, নাকি নির্বাচনে নেমে একটি পক্ষের কাছে থেকে সুবিধা নেবেন। এমন কথাও আসছে লোকমুখে। এমনকি আওয়ামী লীগেরই একটি পক্ষ নেপথ্যে থেকে সাইদকে ইন্ধন দিচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে।”

দলের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যেখানে দীর্ঘদিন ছিলেন দলের বাইরে। নেতাকর্মীদের খোঁজ নেননি। দলীয় সভায়-মিছিলে যাননি সেই সাইদ কীভাবে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন? আর বর্তমান মেয়রকে ঘিরে এই মুহূর্তে ভোটের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে ভোটে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও সুবিধা নিতেই মেয়র পদে অংশ নিতে পারেন সাইদ।”

বিএনপির মহানগরের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, “আমাদের দলের কেউ এ নির্বাচনে অংশ নেবে না। যেই এ নির্বাচনে অংশ নেবে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অনুসন্ধানে গেছে, ১৯৮৮ সালে রাসিক গঠনের পর থেকে এই প্রথম মেয়র পদে বিএনপির সরাসরি কোনো প্রার্থী যদি না থাকে, তাহলে সেটি হবে একটি রেকর্ড। আর এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় মেয়র পদে অনেকটা নিরানন্দ অবস্থা বিরাজ করছে। একমাত্র আলোচনার ডালপালা মেয়র লিটনকে ঘিরেই চলছে।

নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, “মেয়র তো এবারও লিটনই হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে। তার উন্নয়নের কাছে অন্য প্রার্থীরা টিকবে না। ফলে কাউন্সিলর কে হবেন, সেটি নিয়েই আমরা নানা জল্পনা-কল্পনা করছি। এই প্রথম মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। লিটনের উন্নয়নও তাকেই এগিয়ে রেখেছে বেশি। যার কারণে এই প্রথম মেয়র পদে ভোটের নিরুত্তাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এর আগে প্রতিটি নির্বাচনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। আমরা কাউন্সিলর কে হচ্ছেন, সেটি নিয়ে মাথায় ঘামাইনি। কিন্তু এবার পুরো উল্টো চিত্র।”

দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে অনেক বিএনপি নেতাও ঘুরছেন আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে। আবার অনেক আওয়ামী লীগ, যুবলীগের প্রার্থীরা তো আছেনই।

বিষয়টি স্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, “অনেকেই আসছেন আমাদের কাছে কাউন্সিলর পদে সমর্থন পেতে। আমরা কাউন্সিলর পদে কাউকে সমর্থন দেব না। আমরা মেয়রের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব, তাই করছি। ফলে বিএনপি বা যে দলেরই প্রার্থী আসুক না কেন, আমরা সেটিকে পজিটিভভাবে নিয়ে লড়াই করে জিততে চাই।”