নওগাঁয় ঈদ বাজার

মেয়েদের পছন্দ ডালি স্কার্ট, ছেলেদের সুলতানি পাঞ্জাবি

এম এ রাজ্জাক, নওগাঁ প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৩, ১২:০৫ পিএম

ঈদ মানে নতুন কিছু চাই। তা হোক পোশাক, প্রসাধনী, জুতা বা অন্য কিছু। ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কদিন বাকি। নওগাঁয় এবার তুলনামূলক আগেভাগেই জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। ফুটপাত থেকে শুরু করে বহুতল শপিং কমপ্লেক্স, সব জায়গায়ই ক্রেতাদের পদচারণায় সরগম হয়ে উঠেছে।

ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঈদ বাজার উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বিপণিবিতানগুলো আলোকসজ্জা করেছেন। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাদের ভিড়ও তত বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশি। এখন পর্যন্ত বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা। তবে দোকানদাররা জিনিসপত্রের দাম বেশি হাঁকছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের দেওয়ান বাজার, আনন্দবাজার শপিং কমপ্লেক্স, মক্কা মার্কেট, জহির প্লাজা, শুভ প্লাজা, ইসলাম মার্কেট, সৌদিয়া সুপার প্লাজা, মাজেদা সুপার মার্কেট, গীতাঞ্জলি মার্কেটসহ অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। বিকেলে এবং
সন্ধ্যার পর এসব মার্কেটে ভিড় দেখা গেছে।  

কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। তার মধ্যে আয়োজনে ভিন্নতার কারণে আসমান বিগবাজার, শিলামনি, শিমুল বুটিকস বাঁকুড়া বস্ত্রালয়, পালকি বুটিকস, কুমারখালী বস্ত্রালয়, প্রিয়া ফ্যাশনসহ বেশ কিছু দোকানে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন।

ছোট বড় সব বয়সী মেয়েদের জন্য ভিন্ন ধরনের থ্রি পিস, জিপসি, টপস, ফ্লোর টাচ নামের পোশাক রয়েছে বিপণিবিতানগুলোতে। এসব পোশাক ১ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও তরুণীদের হাল ফ্যাশনের বিভিন্ন ধরনের গাউন ফ্রক ও লেহেঙ্গার চাহিদা রয়েছে প্রচুর।

ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ভজ গোবিন্দ’ নাটকের চরিত্র ডালি চৌধুরী। ওই চরিত্রের নামে দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে ডালি গাউন ও ডালি স্কার্ট। এই গাউন ও স্কার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া পদ্মাবত সিনেমার চরিত্র রাণী পদ্মাবতীর নামে বাজারে আসা ‘পদ্মাবতী লেহেঙ্গা’ তরুণীদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। এই লেহেঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। ছেলেদের সুতি পাজামা-পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া ছেলেরা চাচ্ছে সুলতান সুলেমান সিরিয়ালের সুলতানি পাঞ্জাবি।

নারীর কাপড়ের পাশাপাশি পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে কসমেটিকস সামগ্রী কিনতে ভিড় করছেন শহরের চুরি পট্টির বিভিন্ন দোকানে। এছাড়াও যথেষ্ট ভিড় লক্ষ করা গেছে শহরের বিভিন্ন জুতার দোকানেও। ছোট থেকে শুরু করে সবাই পছন্দের জুতা কিনতে ব্যস্ত।

আনন্দবাজার শপিং কমপ্লেক্সের পোশাকের দোকান শিলামনির বিক্রয়কর্মী সোহেল বলেন, “ভজ গোবিন্দ নাটকের নায়িকা ডালি চৌধুরী যে সব গাউন ও স্কার্ট পরেছে, মেয়েরা ওই পোশাকগুলো বেশি কিনছে। এইবার ডালি গাউন ও স্কার্ট হিট। শুধু বড়রা না ছোটদের জন্যও এই পোশাক আছে। এছাড়া পদ্মাবতী লেহেঙ্গাও ভালো বিক্রি হচ্ছে।”

দেওয়ান বাজার মার্কেটের আসমান বিগবাজার দোকানের সত্ত্বাধিকারী ওহিদুর রহমান বলেন, “দশ রমজানের পর থেকেই এবার ঈদের কেনাকাটা পুরো দমে জমে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা ভালই হবে বলে মনে হচ্ছে। আমাদের দোকানে সব ধরণের কালেকশন রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের হাল ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে দোকানে বিভিন্ন ধরণ ও দামের পোশাকের সমাহার রেখেছি। এর মধ্যে তরুণীদের বেশি পছন্দ দেখা যাচ্ছে ডালি গাউন ও সারেরা গারেরা-এর প্রতি।”

ঈদের কেনাকাটা করতে মান্দা উপজেলা থেকে চার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে নওগাঁ শহরে এসেছেন আমজাদ হোসেন। শহরের দেওয়ানবাজার মার্কেটে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “ঈদ উপলক্ষে বড় ছেলে ও মেঝ মেয়ে বায়না ধরেছে জিন্স প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও ডালি গাউন কিনে দিতে হবে। আর ছোট মেয়েটার পছন্দ ডালি স্কার্ট। তিনটা জামা কিনতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হলো। মেয়েদের আবদার পূরণ করতে দেউলিয়া হয়ে গেলাম।”

কাপড়পট্টি মার্কেটের থান কাপড় ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী শাপলা ক্লথ স্টোরের মালিক করিম বলেন, “সাধারণত রোজার শুরু থেকেই ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম  হয়নি। কারণ, কাপড়ের ছিট কিনে সেগুলো তৈরি করতে সময় লাগে। এ জন্য ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে নেন। এবার যেভাবে বেচাকেনা হচ্ছে তাতে আমরা খুশি।”

নওগাঁ পোশাক মালিক সমিতির সভাপতি সাজাহান আলী বলেন, “নওগাঁয় বেশকিছু ভালো মানের তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানগুলোতে ক্রেতাদের রুচি এবং ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা পণ্যের সমাহার রাখছেন। আর ছিট কাপড়ের জন্য আগে থেকেই নওগাঁর একটা সুনাম রয়েছে। ফলে নওগাঁর লোকজনকে কেনাকাটার জন্য বাইরের শহরে যেতে হয় না।”

নওগাঁ জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রুবেল আহমেদ বলেন, “জন-সাধারণের কাছ থেকে যেন ব্যবসায়ীরা বেশি দাম না নিতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে আমাদের অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।”