‘এই দেশ সমতার, একসাথে ইফতার’

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩, ০৯:০৪ এএম

‘এই দেশ সমতার, একসাথে ইফতার’—এই স্লোগানকে ধারণ করে কুড়িগ্রামে চলছে ব্যতিক্রমী ইফতার আয়োজন। পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে চলে ইফতার। কখনো মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। কখনো বা একসঙ্গে বসে সকলে মিলে সেই ইফতার গ্রহণ করছেন।

এমনি এক ব্যতিক্রম আয়োজন করেছে কুড়িগ্রামের স্থানীয় মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মেঠোজন’। সংগঠনটির এমন উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে শহর জুড়ে সর্বত্র।

আয়োজকরা জানান, একসঙ্গে বসে ইফতার করার পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, ধরলা সেতুতে, আশ্রয়ণের আশ্রিত দুস্থ এবং পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়। কুড়িগ্রাম রিভার ভিউ হাই স্কুল মাঠে প্রতিদিন চলে এই ইফতার তৈরি এবং প্যাকেজিংয়ের কাজ। এই ইফতারে ভাত জাতীয় খাবার দেওয়া হয়। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪শত মানুষকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কিংবা একসাথে বসে ইফতার গ্রহণ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার জিরো পয়েন্ট শাপলা চত্বরের ইফতারে অংশ নিয়েছেন রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, অটোচালক, দুস্থ নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন। আবার ইফতারের সময়ের আগে শহরের বিভিন্ন জায়গার দুস্থ-গরীব মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার। হাতের কাছে ইফতারের সময় খাবার পেয়ে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ।

ইফতারে অংশ নেওয়া রিকশাচালক শহিদুল বলেন, “সারাদিন রিকশা চালিয়ে আর কয় টাকা পাই। বাড়ির জন্য ইফতার কিনতে পারি না। এনাদের ইফতার পেয়ে খুবি ভালো হলো।”

চর কুড়িগ্রামের বাসিন্দা রশিদা বেগম ইফতার করতে করতে বলেন, “আমরা ভিক্ষা করে খাই। হঠাৎ দেখি এই শাপলায় এমন ব্যবস্থা। তাই বসে পড়ছি। দুইটা ভালো মন্দ খাইতে পারতেছি। যারা এ্যাগলা করছে আল্লাহ তামার ভাল করুক।”

স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি বিভিন্ন সময় বন্যার্ত ও শীতে কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোকে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। তাদের পাশেও এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলার দেশে-বিদেশে অবস্থান করা মানুষগুলো। যারা প্রতিনিয়ত আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

মেঠোজনের সভাপতি ইউসুফ আলমগীর বলেন, “মানবিক সকল উদ্যোগের সঙ্গে মেঠোজন সবসময়ই রয়েছে। আর এই ইফতার আয়োজনের জন্য কেউ চাল, কেউ ডাল, কেউ মশলা, কেউ তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে অংশ নিচ্ছেন। আবার অনেকেই পরিশ্রম করতে স্বেচ্ছায় চলে আসছেন আমাদের রিভার ভিউ হাই স্কুল মাঠে। যেখানে রান্না ও প্যাকেজিংয়ের কাজটি হয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪০০ মানুষকে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কিংবা একসঙ্গে বসে ইফতার গ্রহণ করছি।”

ইউসুফ আলমগীর আরও বলেন, “এই ইফতার প্যাকেটটি অনেকের কাছে কি যে কাঙ্ক্ষিত, তা আমরা কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি। সবসময়ই ভাত জাতীয় খাবার দিয়েই আমরা ইফতার আয়োজন করি। কখনো বিরিয়ানি কখনও বা খিচুড়ি কিংবা সাদা ভাত থাকছে এ ইফতারে। আমরা কৃতজ্ঞ যারা আমাদের সহযোগিতা করছেন।”

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম বলেন, “মেঠোজনের এই উদ্যোগ কুড়িগ্রামবাসীকে আরও অনুপ্রাণিত করছে। কেননা তারা বিভিন্ন এলাকার মধ্যে গিয়ে উপস্থিত ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে। যারা ইফতার করতে পারে না সেইসব দুস্থ ও সাধারণ পথচারীদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার করছে।”