দেশমাতৃকার টানে জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে যান বাঘা

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩, ০৯:৪২ এএম

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরনগড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ওরফে বাঘা (৬৫)। ১৯৭১ সাল টগবগে তরুণ। তখন মনে ছিল অদম্য সাহস আর দেশপ্রেম। নীতি, আদর্শ আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাক। ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার পর দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে চাইলে পরিবারের পক্ষ থেকে আসে নানান বাধা। তিনি তখন দু-ছেলে আর তিন মেয়ে সন্তানের জনক। পরিবারে মা, বাবা আর দুই ভাই। তিনি ছোট। সব উপেক্ষা করে যান মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসী গল্প বলেছেন সংবাদ প্রকাশকে।

বঙ্গবন্ধু ৬৯ সালে সভা করেছিলেন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনার বাজারে। সেখানে গিয়েছিলেন বাঘাও। ৭০ সালে সুনামগঞ্জে ফের আসেন বঙ্গবন্ধু, সেখানেও যান তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই জ্বালাময়ী ভাষণ রেডিওতে শোনার পর যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

প্রথমেই নুরুল ইসলাম বাঘা বড়ছড়া ৫ নম্বর সাব সেক্টরে যান। সেখান থেকে তাকেসহ অনেককেই পাঠানো হয় প্রশিক্ষণে। ইকওয়ান ট্রেনিং সেন্টারে রাশিয়ান এলএমজি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ শেষে আবারও বড়ছড়া ৫ নম্বর সাবসেক্টরে চলে আসেন। তখন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দুইমাস পর দায়িত্ব পান মীর শওকত। এরপর কোম্পানি কমান্ডার মেজর ডিন (মোসলেম উদ্দিন)।

নুরুল ইসলাম বাঘা বলেন, “১১ অক্টোবর যুদ্ধ করি জীবনকে হাতে নিয়ে। সেদিন ভেবেছিলাম আর বেচে ফিরতে পারব না। তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের তহশিল অফিসের যাকে কাচারি বলা হয়। সেখানে পাকিস্তানিদের ঘাঁটি ছিল। সেখান থেকে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে অত্যাচার চালাত। খবর পেয়ে ট্যাকেরঘাট ৫ নম্বর সাবসেক্টর থেকে বড় ভাই আলী আমজাদের নেতৃত্বে ভোরে শাহগঞ্জ গ্রামে নৌকা রেখে পায়ে হেঁটে গ্রামের ভেতর দিয়ে কাচারির পশ্চিম দিকে সবাই অবস্থান নিই। এই মুখোমুখি যুদ্ধ করার সময় সহযোদ্ধা কাশেম মাথা উঁচু করেছিল পাকিস্তানিদের অবস্থান দেখার জন্য। সঙ্গে সঙ্গেই বুকে বুলেট বিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পাশেই ছিলাম আমি। কাশেম মারা যাওয়া পর সবাই যে যার মত ফিরে যাই। আমি আর কাশেম এলএমজি চালাতাম। ভারি অস্ত্রসহ কাশেমকে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি।”

নুরুল ইসলাম বাঘা জানান, যুদ্ধ পরে জীবন বড়ই কষ্টে কাটে। কারণ তখন কোনো কাজ বা চাকরি করার সুযোগ পাইনি। ১৫ আগস্টের পরের দিন খবর পান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের ধরপাকড় শুরু হলে গা ঢাকা দিতে চলে যাই ভৈরব। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। পরে ঢাকা পুরান ঢাকায় গিয়ে স্বর্ণের দোকানে কাজ করি। বিয়ে করি বকশি বাজারে।

১৯৮৮ সালে ভারতের মুম্বাই চলে যান বাঘা। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ঢাকা স্ত্রী আর সন্তানদের কাছে এসে এরপর তাহিরপুর নিজ গ্রামে চলে আসেন। কয়েক বছর হলো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি মিলেছে।  

এই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, “প্রতিটি যুদ্ধে আমি নাকি বাঘের মত পাকিস্তানিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম। পাকিস্তানি ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে বীরত্বে সঙ্গে যুদ্ধ করায় আমার সহযোদ্ধারা আমাকে বাঘা উপাধি দিয়েছিল।”