সূর্য শিশির : যে উদ্ভিদ পতঙ্গ খায়

বিজন কুমার, দিনাজপুর প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩, ০৮:৫০ এএম

দেখে মনে হতে পারে, উদ্ভিদটির পাতায় শিশির জমেছে। আদতে তা নয়, সবই নিঃসৃত আঠা। এই আঠাই যেন হাতিয়ার। এছাড়াও উদ্ভিদটির নিজের শরীর থেকে গন্ধ ছড়ানোর এক ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যে গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে কীটপতঙ্গ ছুটে আসে তার দিকে। উদ্ভিদটির নাম সূর্য শিশির। সাম্প্রতিক দিনাজপুর সরকারি কলেজে দেখা মিলেছে বিলুপ্ত প্রায় এই উদ্ভিদের। পৃথিবীতে যে কয়েকটি মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো এই সূর্য শিশির।

সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্ভিদটি ব্যাস ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। রয়েছে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জরি আর ১৫/২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতা। এই পাতাগুলোতে ঢালু পিন আকৃতির কাঁটা রয়েছে। এই কাঁটাগুলোর আগায় এক ধরনের আঠা জমে আছে। রাতের শিশির আঠাগুলোতে এমনভাবে জমে আছে যেন উজ্জ্বল একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব। কাঁটার ফাঁকা অংশগুলোতে অনেক কীটপতঙ্গ প্রবেশ করে আটকা পড়েছে। যতই কীটপতঙ্গগুলো নড়াচড়া করছে মাংসল পাতার চারদিকের পিনগুলো বেঁকে গিয়ে তাদের আটকে রাখছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাতের শিশির গাছের আঠার সাথে জমে সূর্যের আলোয় চিকচিক করে বলে এই উদ্ভিদের নাম বাংলায় সূর্য শিশির।

কলেজটির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সূর্য শিশির উদ্ভিদটি বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। জীবনকাল জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। ২০০৫ সালে সরকারি কলেজের পুকুরের পার্শ্ববর্তী মাঠে প্রথম এই উদ্ভিদটি আবিষ্কার করেন কলেজটির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। উদ্ভিদটির জন্মানোর জায়গায় অবাধে মানুষ ও পশুর বিচরণের ফলে কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর কম জন্মেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মরু অঞ্চলের এই উদ্ভিদটি তার শরীরের চেয়ে বড় পতঙ্গকে গলধকরণ করতে পারে। বিশেষ করে মাছি, মাকড়শা, বড় কাঠ পিঁপড়া। এক বীজপত্রী মাংসাশী এই উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘ড্রোসেরা বার্মানি’। আর ইংরেজিতে বলা হয়—Sun dew.

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে কলসুম লাবনী বলেন, “আমাদের চারদিকে অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তি পথে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে আসছে। অনেক বৃক্ষ-উদ্ভিদ হারিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে একটি হলো সূর্য শিশির। বাঘ আর সূর্য শিশির হয়তো প্রাণীকে খেয়ে ফেলছে। কিন্তু এগুলো যদি হারিয়ে যায় তবে আমাদের খাদ্যশৃঙ্খল কিন্তু নষ্ট হবে। খাদ্য শৃঙ্খল রক্ষায় সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিৎ।”

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মানিক বলেন, “আমি সূর্য শিশির সম্পর্কে তেমন জানি না। শুনেছি পতঙ্গ খায়। একটু ভেবে দেখুন আমরা পৃথিবীতে টিকে আছি গাছের জন্যই। কিন্তু অনেক গাছ আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।”

দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, পৃথিবীতে প্রাণী খেকো উদ্ভিদের মধ্যে সূর্য শিশির একটি। এরা গলধকরণ প্রক্রিয়াতেও খাদ্য গ্রহণ করে। উদ্ভটির পাতায় নিঃসৃত একধরনের আঠায় (মিউসিলেজ সাবস্ট্যান্স এনজাইম) রাতে শিশির জমে। আর সূর্যের আলোয় তা চিকচিক করে। এ জন্যই মূলত এই উদ্ভিদের নাম হয়তো সূর্য শিশির। তাছাড়া এই উদ্ভিদ থেকে এক ধরনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পতঙ্গ ছুটে আসে এবং আটকা পড়ে। একটা সময় পতঙ্গটির মৃত্যু হলে পরিশোষণ প্রক্রিয়ায় তাকে ভক্ষণ করে। এই উদ্ভিদ সংরক্ষণে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।