“আমার স্বামীর হাত ধরেই এই ব্যবসা করে আসছি। এখন স্বামী বেঁচে নেই। যখন স্বামী বেঁচে ছিলেন তখন তিনি এসব মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতেন। এখন আমার ভাইরা চাকা ঘুরায়। তাদের কাছে পাইকারি কিনে ব্যবসা করি। আগের মত আর চলে না ব্যবসা। এখন সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। মাটির জিনিস পূজার সময় একটু বেশি বিক্রি হয়। তারপরে আর নেই। সারাদিনে ৫০০ টাকা বেচা-কেনা হয় না। লাভ তো বাদেই দিলাম।”—এভাবেই আক্ষেপে কথাগুলো বলেছিলেন পার্বতী পাল নামে দিনাজপুরের এক নারী মৃৎশিল্পী।
শুধু পার্বতী পাল নয়। তার মত অনেক মৃৎশিল্পীর অবস্থা একই রকম। আধুনিকতার যুগে অনেকটাই শোচনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে এসব মৃৎশিল্পীদের জীবিকা। কাঁচামালের অভাব, সরকারি সুযোগ সুবিধা নেই, নেই অনুদান। সব মিলিয়ে মৃৎশিল্পীরা প্রকাশ করছেন আক্ষেপ।
দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট মৃৎশিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ হাজার ৯৮৯টি। যার প্রতিটিতে অনধিক ৬ জন করে কাজ করছেন।
রামচন্দ্র পাল নামে এক মৃৎশিল্পী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আগে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা ভালো ছিল। সেই সময় যেত এক ট্রাক্টর মাটি নিলে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকত। কিন্তু এখন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ ওঠানোই কঠিন। তাছাড়া আগে মাটি পাওয়া যেত ভালো। কিন্তু এখন মাটি পাওয়া যায় না। খুবই সংকট। বিক্রি বেশি পূজার দিনগুলোতে।
বৈদ্যনাথ পাল নামে এক মৃৎশিল্পী চাকা ঘুরিয়ে মাটির জিনিসপত্র বানাতেন। বর্তমানে চাকা ঘুরানো বাদ দিয়ে মুদি ব্যবসা করছেন। তবে পাইকারি দরে মাটির জিনিসপত্র কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। কথা হলে তিনি বলেন, “জাতি ব্যবসা বলে ছাড়তে পারি না। চাকা না ঘুরিয়ে এখন পাইকারি কিনে ব্যবসা করি। এতে লাভ কম হয়। কাহারোল, কাঁওগা, সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মাটির জিনিসপত্র কিনে বিক্রি করি। বাবা-দাদার শিখিয়ে যাওয়া ব্যবসায়। খুচরা বাজারে বিক্রি করেও তেমন লাভ হয় না।”
দিনাজপুর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী বলেন, “বর্তমানে মাটির জিনিসের ব্যবহার কম হয়। তাই এই শিল্প এখন বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের যে কয়টি শিল্প রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো কটেজ শিল্প। তার মধ্যে এই মৃৎশিল্প আছে। কাজেই মৃৎশিল্পীদের আলাদা করে কোনো প্রকার ঋণের ব্যবস্থা নেই। তবে কটেজ শিল্পের আওতায় তাদের ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। আর অনুদানের ব্যবস্থা আলাদাভাবে তেমন নেই।”