প্রাকৃতিক মৌচাকে শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদল

এম এ রাজ্জাক, নওগাঁ প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের পীরপালি ও ফেটগ্রাম নামের দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা মৌমাছির চাক। বর্তমানে এই দুটি গ্রাম মৌমাছির চাকের গ্রাম হিসেবে বেশি পরিচিত। এক একটি বাড়িতে শতাধিক মৌমাছির চাক। আর সেই চাক থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে প্রতিদিনই শতাধিক দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন ওই বাড়িগুলোতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িতে ঘরের ভেতরের মৌমাছিরা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করেছে অসংখ্য মৌচাক। হাজার হাজার মৌমাছি উড়ছে; আর বাড়ির লোকজনও একসঙ্গে চলাফেরা করছে। এ যেন মৌমাছি আর মানুষের এক অনন্য মিতালি। এলাকার এক বাড়িতে ৩০ থেকে ৫০টি মৌমাছির আবাসস্থল। পীরপালি ও ফেটগ্রামের অধিকাংশ বাড়ির ঘরের দেয়ালে, বারান্দায়, ছাদের কার্নিশে, ঘরের ভেতরের কক্ষসহ গাছের ডালে বাড়ির আনাচে-কানাচে মৌমাছির দল আবাসস্থল গড়ে তুলেছে।

একটি মৌচাক থেকে ৩ থেকে ৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। এতে এলাকার পরিবারগুলোর ভাগ্য ফিরেছে। এই গ্রামের মানুষদের ভাগ্য ফেরার চিত্র এখন সবার মুখে মুখে। সরিষা চাষের মৌসুমে এই মৌমাছি মৌচাক তৈরি করে। একটি মৌচাক থেকে একাধিকবার মধু সংগ্রহ করা যায়। আবার মৌসুম শেষ হয়ে গেলে অধিকাংশ মৌমাছি অন্যত্র চলে যায়।

পীরপালি গ্রামের জলিল হোসেন বলেন, ২৫-৩০ বছর ধরে এই পরিবারগুলো এভাবেই চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে আসছে। সরিষা চাষের মৌসুমে মৌমাছি ফিরে এসে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে মৌচাক তৈরি করে। একটি স্থানীয় কোম্পানি মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে দেশ ও বিদেশেও রপ্তানি করে আসছে। প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।

রাজশাহী থেকে আগত দর্শনার্থী রকিবুল হাসান বলেন, “মৌমাছি আর মানুষের একসঙ্গে এমন বসবাস আগে কখনো দেখিনি। খুব অবাক করার মতো একটি বিষয়। খুবই ভালো লেগেছে। আর প্রাকৃতিকভাবে আহরিত এই মধু সত্যিই খুব সুস্বাদু।”

মধু কোম্পানির প্রোপ্রাইটর আব্দুর রহিম বলেন, “আমি আশাবাদী একদিন নওগাঁয় উৎপাদিত মধু তার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হব। আর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে প্রায় ৩০-৫০টি মৌচাক রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার মৌচাকের সঙ্গে বসবাস করে আসছেন গ্রামবাসীরা। এই মধু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে রাজারজাত করা হচ্ছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, চলতি সরিষা মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এই মধু সংগ্রহ করতে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মৌ-বাক্স প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বাইরে থেকে মৌয়ালদের নওগাঁয় এসে মধু সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যার কারণে এই মধু সংগ্রহ করতে নতুন করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে অনেক বেকারের।