ভ্যান চালিয়ে জিপিএ-৫ পেলেন রমজান

মো. জহিরুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ১১:০০ এএম

মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে হারান রমজান। তারপর থেকে মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা তার। এদিকে স্বামীকে হারিয়ে চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তার মা। সন্তানদের ভরণপোষণ জোগাতে হাড়ভাঙা খাটুনি করতেন তিনি। পরিবারের কষ্ট লাঘবে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজে নেমে পড়েন রমজানও। নিজের পড়ার খরচ জোগাতে অন্যর বাড়িতে কাজ শুরু করেন। পরে ভ্যান চালানোর কাজ নেন। পড়াশোনার অদম্য আগ্রহের ফলও পান তিনি। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের মীরডাঙ্গী গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে রমজান আলী। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাড়ির পাশে মীরডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.১১ ও প্রকাশিত এইচএসসিতে রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, “তার জীবনটা একটা সংগ্রাম। অনেক কষ্ট করে সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, ভ্যান চালিয়ে ভালো ফল করেছে। তার ফলাফলে আমরা অনেক খুশি। আমরা তার পাশে ছিলাম। আগামীতেও তার পাশে দাঁড়াব। সেই সঙ্গে সবাইকে তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।” 

রমজান আলী বলেন, “পরীক্ষা শেষ করার পর আমি ঢাকায় চলে আসি। এখানে এসে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করি। এখনো গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কর্মরত আছি। ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর পাইনি। মা অনেক কষ্ট করে আমাকে লালনপালন করেছেন। মায়ের সঙ্গে কাজ করে নিজের খরচ ও পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। তবু পিছপা হইনি।”

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে রমজান আরও বলেন, “আর্থিক সমস্যার কারণে কোচিং করতে পারিনি। সে কারণে ভাবছি এক বছর পর ভর্তি হব। তারপরও চেষ্টা করব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার।”

এ বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকারনাইন বলেন, বিষয়টি যেমন কষ্টের, তেমনি অনুপ্রেরণার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।