সন্তানকে লিভার দিতে রাজি মা, অর্থাভাবে থমকে আছে চিকিৎসা

মো. জহিরুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ১২:৫৮ পিএম

১১ বছর বয়সী ফারহান সাদিক। প্রতিবেশীরা ডাকেন বর্ষ নামে। আট বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়ে সাদিক। নিজ জেলা ও ঢাকায় চিকিৎসা করেও ধরা পড়েনি কোনো সমস্যা। কোনো সমস্যা ধরা না পড়লেও অসুস্থতা কাটে না তার।

ক্রমান্বয়ে অসুস্থতা বাড়তে থাকে সাদিকের। উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের হায়দরাবাদে। ধরা পড়ে রোগ। বিকল হয়ে পড়েছে সাদিকের লিভার। সুস্থ করতে দ্রুত করতে হবে লিভার পরিবর্তন। পরিবারে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। সব রেশ কেটে মায়ের লিভারের অংশ সাদিককে দেওয়া পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। তবে সাদিককে সুস্থ করতে অপারেশন করতে হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে। সন্তান সাদিককে সুস্থ দেখতে লিভার দিতে রাজি মা, থমকে আছে শুধু চিকিৎসা খরচ। নিজের জমানো টাকা, বসতভিটা বিক্রি ও আত্মীয়দের সহযোগিতা নিয়েও হচ্ছে না চিকিৎসার খরচ।

ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের সরকারপাড়া গ্রামের বাসের হেলপার দেলোয়ার হোসেন ও বাবলী বেগম দম্পতির ছোট ছেলে ফারহান সাদিক বর্ষ। দুই ছেলের মধ্যে সাদিক ছোট। সে সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় চালিয়ে নেওয়া হয়ে ওঠেনি তার পড়াশোনা। অসুস্থতা নিয়ে এখন সময় কাটে বাড়িতে শুয়ে। অপরদিকে চিকিৎসার খরচ জোগাতে দিশেহারা তার পরিবার।

সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা নিয়ে শিশু সাদিক বলে, “দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারপর থেকে আর পড়াশোনা করতে পারিনি। সহপাঠীরা এবারে পঞ্চম শ্রেণিতে। আমি বড় হয়ে জাতীয় দলের খেলোয়াড় হতে চাই। সবাই আমাকে সুস্থ করতে সহযোগিতা করবেন।”

সাদিকের মা বাবলী বেগম বলেন, “ভারতে নিয়ে যাওয়ার পর লিভারের সমস্যা ধরা পড়ে। সাদিকের বাবা ও আমি দুজনে আমরা লিভার দেওয়ার কথা বলি। আমারটা তাকে দেওয়ার উপযোগী মনে করেন চিকিৎসক। চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহুল। আমরা টাকা জোগানোর চেষ্টা করছি। আত্মীয়স্বজনদের বলছি তবু হচ্ছে না। যদি আপনারা সবাই আমাদের সহযোগিতা করে পাশে থাকেন তবে আমি আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারব।”

সাদিকের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “১৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর তারা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি নেবেন। সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার মতো অপারেশনে খরচ লাগবে। সব আত্মীয়স্বজনের কাছে সাহায্য চাচ্ছি। আমাদের পক্ষে এত টাকা জোগাড় সম্ভব না।”

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, “সাদিক বেশ মেধাবী৷ তাকে সুস্থ করতে পারলে ভবিষ্যতে সে ভালো কিছু করতে পারবে। আমরা সকলে সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।”

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, “বিষয়টি আসলে বেদনাদায়ক। চিকিৎসার খরচ অনেক। আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব পাশে থেকে সহযোগিতা করা হবে।”

সাদিককে সহযোগিতা পাঠানো যাবে তার বাবা দেলওয়ার হোসেনের বিকাশ ০১৭১৬-৪১৪৯২৩ নম্বরে। এছাড়া সহযোগিতা পাঠানো যাবে ব্যাংকের মাধ্যমেও। দেলওয়ার হোসেন, হিসাব নং ২৪৪২২, ইসলামী ব্যাংক, ঠাকুরগাঁও শাখা।