নওগাঁর নিয়ামতপুরে একটি মুদি দোকানে চাল কিনতে এলেন স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা। পরিকল্পনায় ছিল পুরো এক বস্তাই কিনবেন, তবে মোটা চাল পাইজামের কেজি ৫৫ টাকা দেখে হতাশ চেহারায় নিয়ে গেলেন ১৫ কেজি। তিনি বলেন, “নতুন ধানের চাল তো বাজারে এসেছে এক মাস হলো, দাম কমার তো কোনো লক্ষণ নেই। সরু চাল ছেড়ে মোটা চাল ধরেছি, খরচ হচ্ছে আগের মতই।”
নওগাঁর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস ধরে মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে অন্তত দুই টাকা করে কমেছে। তবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর শেষ পর্যন্ত সময়ে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকায় ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় চালের দাম এখন বেশ বাড়তি।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে সরু চালের দাম ৩ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম আড়াই শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৫ শতাংশ কমেছে। তবুও এক বছর আগের তুলনায় সরু চাল আড়াই শতাংশ, মাঝারি চাল সাড়ে ৫ শতাংশ এবং মোট চাল ৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে, নওগাঁর বাজারগুলোতে এখন সরু চাল প্রতিকেজি ৫৮ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৬২ থেকে ৭৫ টাকা, এক বছর আগে দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাঝারি চাল এখন প্রতিকেজি ৫২ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং এক বছর আগে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হত।
দামে কিছুটা কম হওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ কেনেন মোটা চাল, মান ভেদে যা এখন প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে যা ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা এবং এক বছর আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের মুদি দোকানি আলমগীর বলেন, “চালের দাম কমার আশায় আমিও আছি। চালের দাম কমে যেতে পারে এমন আশায় নওগাঁর মহাদেবপুরের বাজার থেকে কম পরিমাণে চাল কিনছি। বিক্রিও হচ্ছে কম।”
চলতি আমন মৌসুমে প্রতিকেজি ৪২ টাকা দরে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। এক মাসেরও বেশি সময়ে মাত্র দেড় লাখ টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে। সরকার আমন ধানের সর্বোচ্চ দর প্রতি মণ ১ হাজার ১২০ টাকা নির্ধারণ করলেও বিভিন্ন জেলায় ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায় নতুন ধান বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে সরকারের সংগ্রহ হচ্ছে কম।
নওগাঁ চাল কল সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফুরাদ চকদার জানান, এক মাস ধরে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল। মোটা চাল ও আটাশ চালের দাম কিছুটা কমেছে। ১৫ ডিসেম্বরের পর বস্তায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে কমেছে। তবে মিনিকেট বা সরু চাল এখনও ঊর্ধ্বমুখী। বোরো মৌসুমের ধান আসার আগে সরু চালের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।