‘বিশতবার (বৃহস্পতিবার) ভাত আনছি (রান্না করছি) বা। সেই ভাত খায়্যা আছিলুং। এই চার দিন পর আজ ভাত খাইলং। এই কয়দিন পারুটি খাইছি। দোকান থাকি পারুটি আনি আনি খাইছি”—কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন বিছানায় পড়ে থাকা ৬৫ বছরের বৃদ্ধা যুগিয়া রবিদাস।
কয়েক মাস ধরে বয়সের ভারে হাঁটাচলা করতে না পেরে বিছানায় কাটে তার সর্বক্ষণ। চোখেও ঠিকঠাক দেখেন না। পৌরসভা থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হলে পান না কোনো সুবিধা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা সেতুসংলগ্ন নদী রক্ষা বাঁধের নিচে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একতা পাড়ায় একটি ঝুপড়ি ঘরে এক ছেলে ও দুই নাতনিকে নিয়ে বসবাস করেন যুগিয়া রবিদাস।
বৃদ্ধা যুগিয়া রবিদাস বলেন, “হামার কাইও নাই বা। কষ্ট করি এই ঘরত থাকি। হামার নিজের কোনো বসত ভিটা, ঘরবাড়ি নাই। মাইনশ্যে একন্যে জায়গা দিছে। কষ্ট করি মাটি কাটি। মাইনশ্যের কাছে দুই-একটা করি টিন চায়া নিয়া ঘর তুলছি। এই ঘরত নাতনি-বেটাসহ থাকি।”
বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, নদী রক্ষা বাঁধের নিচে একটি বাঁশ ঝাড়ের নিচে ছোট্ট একটি টিনের ছাপরা ঘরে বসবাস করছে এই অসহায় পরিবারটি। পরিবারের একমাত্র ছেলে নন্দ লাল রবিদাস পেশায় জুতা সেলাই করেন। অভাবের সংসারে ৮ ও ৯ বছরের দুই মেয়েকে রেখে নন্দলালকে ছেড়ে চলে যান তার স্ত্রী। ছেলের প্রতিদিনের রোজগারের ওপর চলে চারজনের ভরণপোষণ।
অর্থাভাবে নিজের দুই মেয়েকে পড়ালেখা করাতে পারছেন না নন্দলাল। মাঝেমধ্যে এক বেলা খাবারের বিনিময়ে অন্যের বাসায় কাজ করে তার দুই মেয়ে। সারা দিন কাজ শেষ করে রাতেই রান্না করলে তবেই খাবার জোটে সকলের। ছোট্ট ঘরটির বিছানায় দুই নাতনিকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধা মা ও এই ঠান্ডায় মাটিতে পাটি বিছিয়ে থাকেন তার ছেলে। ঘরের ভেতরেই রয়েছে অস্বাস্থ্যকর থাকা, খাওয়া ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
নন্দলাল রবিদাস বলেন, “আমি কলেজের পেছনে তালতলায় জুতা সেলাই করি। কোনো দিন ৮০ টাকা, ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা পর্যন্ত কামাই হয়। সেটা দিয়ে বাজার করি আনি, রান্না করা লাগে। তারপর রাইতত সবাই মিলি ভাত খাই। যেদিন কামাই হয় না অল্প টাকা কামাই হলে পারুটি আনি কিনি খাই।”
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম বলেন, “অসহায় পরিবারটির কথা আমাদের জানা ছিলো না। আমরা কাল-পরশু খোঁজখবর নিয়ে পরিবারটিকে যথাযথ সহযোগিতা করব।”