পলিথিন স্বাভাবিকভাবে পচে না। এতে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পরিত্যক্ত পলিথিন কোনো কাজে না লাগলেও এসব গলিয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করছেন যশোরের শার্শা উপজেলার চাষি শেখ আবু তাহের আলী।
নিজের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও মেধা ও ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে মোবাইলে ভিডিও দেখে দেখে শিক্ষা অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের বড় বসন্তপুর গ্রামের তাহের আলী। পরিবার থেকে তার এই কাজকে প্রথম পর্যায়ে মেনে না নিলেও এখন সবাই তাকে সহযোগিতা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বসতবাড়ির সামনেই পরিত্যক্ত স্থানে একটি লোহার ড্রামের সঙ্গে কয়েক স্তরে পাইপের মাধ্যমে তিনটি সিলিন্ডারে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত করা তিনটি হিট মিটার। এরপর ড্রাম ভর্তি পলিথিন দিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করে নিচে আগুন জ্বালিয়ে তা গলানো হচ্ছে।
এরপর ৪০-৫০ মিনিট ধরে উচ্চ তাপ প্রয়োগের পর দেখা যায়, পলিথিন তরল রূপ নিলে পাইপের মাধ্যমে বাষ্পীভূত হয়ে স্তরে স্তরে সিলিন্ডারে জমছে ডিজেল-পেট্রল এবং পাইপের মাধ্যমে আসছে গ্যাস। প্রতিটি সিলিন্ডারের নিচের অংশে যুক্ত করা আছে পাত্র যাতে তেল ভর্তি হয়ে গেলে প্রয়োজনে সেখান দিয়েও বোতলে তেল সংরক্ষণ করা যায়। এই জ্বালানি তেল দিয়ে গ্রামবাসী পরীক্ষা ও দেখা জন্য চালিয়েছেন মোটরসাইকেল ও জমিতে পানি সেচের মেশিনও।
শেখ তাহের আলীর সংবাদ প্রকাশকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ভিডিও দেখার মাধ্যমে তিনি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এভাবে পলিথিন দিয়ে তেল উৎপাদন করবেন। এরপর ২৫ হাজার টাকা জোগাড় করে তিনি সব সরঞ্জাম কিনে পলিথিন জোগাড় করে চার দিন ধরে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করছে এবং তিনি সফল হয়েছেন। প্রতি কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৪০০ মিলিলিটার থেকে ৫০০ মিলিলিটার তেল উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে প্রতি কেজি পলিথিন কিনতে হয় ১৫-২০ টাকা দরে।
তাহের আলী আরও জানান, স্বল্প খরচে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তেল ও গ্যাস উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে পরিবেশকে হুমকির মুখ থেকে রক্ষা করবে, অপরদিকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদন ভালো হয় হবে বলে আশাবাদী তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম বলেন, তাহের আলী শতভাগ সফলভাবেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন দিয়ে জ্বালানি তেল উৎপাদন করছে। এতে একদিকে পরিবেশ ভালো থাকছে, অন্যদিকে জ্বালানি তেল উৎপাদিত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে তেল উৎপাদন করা গেলে স্বল্পমূল্যে জ্বালানি তেল পাওয়া সম্ভব হবে।