ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকেরা

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ১০:০৭ এএম

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলগুলোতে প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। চলতি বছরে কয়েক দফা বন্যার পর জেলার চরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। জেলার ৪২০টি চর-দ্বীপচরগুলোর অনেক কৃষি জমি নষ্ট হয়েছিল। বন্যার সেসব ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে এবং নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বর্তমানে জেলার চরাঞ্চলগুলোতে এ বছর ব্যাপক চাষ করা হচ্ছে ভুট্টা।

জেলার চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুরের চরাঞ্চলসহ ৯ উপজেলায় এ বছর ভুট্টাচাষে বাম্পার ফলনের আশা করছেন প্রান্তিক এসব কৃষকেরা। বিশেষ করে চিলমারী রৌমারী ও রাজিবপুরে সবচেয়ে বেশি ভুট্টাচাষ ব্যাপকভাবে সারা জাগিয়েছে কৃষকদের।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর জেলার সবকটি উপজেলাতেই গত বছরের তুলনায় ভুট্টাচাষের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কাঙ্খিত ফল প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগও আরও বলছে, ভুট্টা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, হাঁস-মুরগী ও গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বেড়েছে অনেক। ভুট্টা গাছের পাতা সুষম গো-খাদ্য এবং কাণ্ড জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে একদিকে যেমন কৃষক তার গবাদি পশু পালন ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারে অপরদিকে বাজারে ভুট্রার ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষক এ ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

চরের কৃষকরা জানান, ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে বেশি লাভ হওয়ায় কম খরচে অধিক মুনাফার আশায় বিকল্প ফসল হিসেবে এ চাষের দিকে তাদের ঝোঁক বেশি। তারা ভুট্টা চাষ করে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি তেলসহ কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষাবাদে খরচ বেড়েছে বলে কিছুটা চিন্তিত তারা। ভুট্টা বিক্রি করে প্রত্যাশিত মূল্য পাবেন কি না এমন দুশ্চিন্তা করছেন তারা।

চিলমারীর পাত্রখাতা এলাকার কৃষক আশরাফ আলী বলেন, “দেড় বিঘা জমিতে এবার ভুট্টা আবাদ করেছি। এখন সব দ্রব্যমূল্যের যে হারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে, যদি কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পেতাম তাহলে অনেক খরচ কমে যেত।”

অষ্টমীরচর ইউনিয়নের মুদাফৎকালীকাপুর এলাকার কৃষক আছান আলী বলেন, “এ বছর ১৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুট্টা কাটা পর্যন্ত বিঘা প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা করে খরচ হবে। যা তুলনামূলক বেশি। কারণ, এখানকার ডিলাররা পর্যাপ্ত পরিমাণ সার দিতে পারে না। যেখানে প্রয়োজন ৩-৪ বস্তা (৫০ কেজি) সেখানে ২ বস্তা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে খোলা বাজার থেকে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। এখন আবাদ ভাল হলেও পরবর্তীতে সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।”

কুড়িগ্রামের প্রান্তিক চর-দ্বীপচরাঞ্চলোতে একসময় কৃষি ফসল হিসেবে গম, চিনা, মসুর, মাশকলাই, খেসারি, মুগডাল, বাদাম ও সরিষাসহ নানা ফসলের চাষাবাদ হত। কিন্ত এখন অল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে ভুট্টা চাষ হওয়ায় সেদিকেই বেশি ঝুঁকছেন কৃষকেরা। অন্য ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের মাঝে অনেকটা অনিহা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করেছেন এখানকার কৃষকেরা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, “এ বছর জেলায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা রোপণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৬০ হেক্টরের বেশি। আশা করি ভুট্টা চাষে গত বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হবেন কৃষকেরা।”