রাজশাহীতে রবি মৌসুমের শুরুতেই সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পটাশ সারের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। যেটুকু রয়েছে তাও কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। তবুও সারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে ৭৫০ টাকার প্রতি বস্তা পটাশ সার কিনতে কৃষকদের গুণতে হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার অতিরিক্ত দামে সার কিনতে গিয়েও দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ সার না পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। ফলে রবি মৌসুমে আলুসহ অন্যান্য সবজি চাষ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় অন্য জাতের তুলনায় কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টেরিক জাতের আলু উৎপাদন হয় অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন আলু চাষের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে কৃষি বিভাগ। অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে ২৬ দশমিক ৫০ টন আলু চাষ করার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যে জেলায় আলু লাগাতে শুরু করেছেন চাষিরা। নভেম্বরজুড়ে আলু চাষের মহোৎসব চলবে জেলায়। সঠিক সময়ের মধ্যে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর এলাকার আলু চাষি রাকিব হোসেন বলেন, আলু লাগানোর জন্য জমি রেডি করা হচ্ছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই পুরোদমে আলু রোপণ শুরু হবে। গত মৌসুমে স্টোরে ওভারলোড হওয়ায় কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যে আলুর দাম ৬০ টাকা কেজি, সেটা ৫০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্টোর ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ বেড়ে গেছে।
সার সংকটের কারণে আলু চাষ থেকে পিছু হটছেন অনেক কৃষক। তানোর উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকার শরিফ হোসেন বলেন, “আলু লাগানোর সময় শুরু হয়েছে। তবে এবার আমি আলু চাষ করছি না। আলু চাষের অনেক খরচ, সার পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। জমির দামও অনেক। সেজন্য আলু চাষ করছি না এবার।”
শরিফ হোসেন আরও বলেন, “গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি, এবার একটুও করবে না। সারের দাম অনেক। বিশেষ করে পটাশ, ডিলার ছাড়া কোনো মাধ্যমে পটাশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর ডিলারের মাধ্যমে যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে ততটুকু দিয়ে আসলে আলু হয় না। সরকারিভাবে প্রতি বিঘা আলুর জমিতে ৪০ কেজি পটাশ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বিঘায় কমপক্ষে দুই বস্তা পটাশ না দিলে আলুর ভালো ফলন পাওয়া যায় না। যার কারণে পটাশ ওইভাবে পাইলাম না, অনেক দাম।”
সার সংকট প্রসঙ্গে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ বলেন, “পটাশ সারের আমাদের যে রেগুলার বরাদ্দ ছিল, বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী আমরা বরাদ্দও পেয়েছি। কিন্তু যশোরের নওয়াপাড়ার যেখান থেকে বরাদ্দটা নিতে হবে, সেই জায়গার সিরিয়াল জটিলতার কারণে সারটা আসতে একটু সময় লাগছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরো সারটা আসবে বলে আশা করছি। এক সপ্তাহ পরে সার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন বলেন, “সার সংকট বা দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা মাঠ পরিদর্শনেও গিয়েছি, এরকম কেউ কিছু বলেনি।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি আবু কালাম বলেন, “সার যা পেয়েছি সারের সংকট নেই। কিন্তু সারা বাংলাদেশে একই সঙ্গে সারের চাহিদার কারণে ডেলিভারি পয়েন্টে একটু সমস্যা হচ্ছে। আলু ও রবি মৌসুম হওয়ায় একটু সমস্যার তৈরি হয়েছে।”
অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি প্রসঙ্গে আবুল কালাম বলেন, “আমরা রাজশাহীতে ৮৯ জন বিসিআইসি সার ডিলার আছি। সরকারি রেটের বাইরে সার বিক্রির আমাদের কোনো সুযোগ নেই। সরকারি যত সংস্থা আছে সবাই সার বিক্রি মনিটরিং করে, আমাদের দোকানে বসে থাকে, বেশি দামে বিক্রির সুযোগ নাই।”