শিক্ষক-সংকটে ব্যাহত পাঠদান

রফিক মোল্লা, সিরাজগঞ্জ প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২, ১০:০০ এএম

দীর্ঘদিন ধরে একজন শিক্ষক দিয়ে ১১৬ শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছিল সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সম্প্রতি আরও একজন শিক্ষক যোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়টিতে। তবু দুর্ভোগ কমেনি।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান একটি ক্লাস নিচ্ছেন। আরেক ক্লাসে সহকারী শিক্ষিকা কুলসুম আক্তার ক্লাস নিচ্ছেন। অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক-সংকটে বসে আছে।

জানা যায়, ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে শিক্ষার্থীরা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছে। কিন্তু পরিপাটি এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। এখানে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-সংকট রয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও ১১৬ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতেন একজন শিক্ষক। তাকেই সামলাতে হতো দুই শিফটের ৬টি ক্লাস ও অফিশিয়াল সব কার্যক্রম।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হলে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে থাকা সহকারী শিক্ষিকা কুলসুম আক্তার তিন দিন আগে বিদ্যালয়ে যোগ দেন। বর্তমানে সেখানে দুজন শিক্ষক রয়েছেন। আরেক শিক্ষক এক বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণে রয়েছেন। যে কারণে শিক্ষক-সংকটে শিক্ষার আলোর বিস্তার কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, যমুনার ভাঙনে পাঁচঠাকুরী গ্রামসহ এলাকার বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দুই বছর আগেও এ বিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থী ছিল। নদীভাঙন ও শিক্ষক-সংকটের কারণে দিন দিন এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, দুই বছর ধরে যমুনার করাল গ্রাসে স্কুলের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর বসতভিটা যমুনার গর্ভে চলে যায়। ভাঙনের কবলে পাঁচঠাকুরী গ্রামটি ভৌগোলিক মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গ্রামের ৭৫ শতাংশ এলাকা যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক-সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পাঁচঠাকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল মমিন তালুকদার জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখার দায়িত্ব। স্কুলের পাঠদানে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাঁচঠাকুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “যমুনা নদীর ভাঙন থেকে স্কুলটি মাত্র ২০০ গজ দূরে রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ না হলে বিদ্যালয় ভবন বিলীনের আতঙ্কে রয়েছি। এর মধ্যে আবার শিক্ষক-সংকট নতুন করে ভোগান্তি বাড়িয়েছিল। এক সপ্তাহ আগেও একা বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। সম্প্রতি কুলসুম আক্তার ট্রেনিং শেষে বিদ্যালয়ে ফিরেছেন। এ ছাড়া কাল-পরশুর মধ্যে আরও একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে এখানে দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানিয়েছেন। এতে কিছুটা হলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে।”

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা সংবাদ প্রকাশকে জানান, ওই বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই যোগদান করবেন। এ ছাড়া সেখানে শূন্যপদ পূরণে জেলা শিক্ষা অফিসকে অবগত করা হয়েছে।