কয়রায় বেড়িবাঁধে ভাঙন, উপকূলজুড়ে আতঙ্ক

সাব্বির ফকির, খুলনা প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২, ০৩:৪৪ পিএম

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খুলনার কয়রায় ‌বেশ কিছু স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে ও কিছু কিছু জায়গা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ভেঙে নোনা পা‌নিতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় কয়রা উপকূলের মানুষ। পা‌নি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বৃ‌ষ্টি‌র পা‌নি‌তে জলাবদ্ধতায় মৎস্যঘের ও বি‌লের আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও বিরাজ করছে।

গভীর নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট হতে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। রোববার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া এ তথ্য জানান।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে হঠাৎ করে কয়রার কপোতাক্ষ নদের তীরের হরিণখোলা বেড়িবাঁধ ও শিবসা নদীর তীরে গাতিরঘেরী বেড়িবাঁধে ধস শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদ্য নির্মিত হরিণখোলার ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে কয়রা সদরসহ আশপাশের এলাকা।

সোমবার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। সময় যত বাড়ছে ঠিক ততোই যেন ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে খুলনার কয়রাবাসীর মাঝে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বাঁধের যা অবস্থা, ঘূর্ণিঝড় হলে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া ছাড়া আমাদের নিস্তার নেই। বরাবরের মত আমাদের ভয় শুধু বেড়িবাঁধ। ঝড়ের নাম শুনলেই না থামা পর্যন্ত তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে এমনটা বলছেন উপকূলের বাসিন্দারা।

কয়রা উপজেলার ভাঙন কবলিত গোবরা এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, কোনো দুর্যোগ এলে তা সবার আগে কয়রা উপকূলে আঘাত হানে। সিডর, আইলা, বুলবুলের আঘাতে এই এলাকার মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন যদি সিত্রাং আঘাত করে তাহলে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান জানিয়েছেন, উপজেলায় ১১৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও খাবার পানি মজুত রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল করা হয়েছে।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে মেরামতের কাজের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কয়রায় হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়ার, আংটিহারা, ৪ নম্বর কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনাও ঝুঁকিতে রয়েছে।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে দাকোপে ১১৮টি, বটিয়াঘাটায় ২৭টি, কয়রায় ১১৭টি, ডুমুরিয়ায় ২৫টি, পাইকগাছায় ৩২টি, তেরখাদায় ২২টি, রূপসায় ৩৯টি, ফুলতলায় ১৩টি ও দিঘলিয়ায় ১৬টি।

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়-সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সোমবারের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষ নদের তীরের হরিণখোলা বেড়িবাঁধ ও শিবসা নদীর তীরে গাতিরঘেরী বেড়িবাঁধে ইতিমধ্যে মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হলে তা মোকাবেলায় আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, “প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই। বিগত দিনের তুলনায় বেড়িবাঁধের অবস্থা ভাল। কিছু জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ আছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সকলে একযোগে কাজ করার জন্য বার বার যোগাযোগ রাখছি।”