পরিত্যক্ত মাছের আঁশে ভাগ্য পরিবর্তন

মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ০৮:৪২ এএম

কুমিল্লায় ফেলে দেওয়া মাছের আঁশে মাহবুব আলম নামে এক যুবকের জীবনে সুদিন ফিরেছে। মাহবুব জেলার আদর্শ সদর উপজেলার গোমতী নদীর পাড়ের ঝাঁকুনিপাড়ার বাসিন্দা। তিনি প্রতিদিন নগরীর রাজাগঞ্জ, টমছমব্রিজ, পদুয়ার বাজার, ক্যান্টনমেন্টসহ বিভিন্ন বাজার থেকে ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকানোর পর প্যাকেটিং করে ৪০ টাকা কেজি দরে সেগুলো বিক্রি করেন।

বিক্রি করা সেসব মাছের আঁশ প্রথমে ঢাকায়, তারপর সেগুলো রপ্তানি করা হয় সিঙ্গাপুর, চীনসহ বিভিন্ন দেশে। তবে পরিত্যক্ত এসব মাছের আঁশের সমৃদ্ধ বাজার জাপান হলেও, বাংলাদেশ থেকে জাপানে সরাসরি রপ্তানির ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়েছেন মাহবুব।

পরিত্যক্ত এসব মাছের আঁশ লিপস্টিকসহ উন্নতমানের প্রসাধনী সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট, ক্যাপসুলের ক্যাপ, বৈদ্যুতিক বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে চীন, সিঙ্গাপুর এবং জাপানে মাছের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড়ের ঝাঁকুনি পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর ত্রিপল বিছিয়ে বিভিন্ন বাজার থেকে সংগ্রহ করে মাছের আঁশ ধুয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত আছেন ৬ জন শ্রমিক। মাসে প্রতি জনকে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেন মাহবুব। শ্রমিকদের বেতন এবং অন্যান্য সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন মাহবুব।

মাহবুব বলেন, “প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কেজি মাছের আঁশ সংগ্রহ করি। প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে ঢাকার এক ব্যবসায়ী নিয়ে যান আমার কাছ থেকে। এক-দুই দিন পরপরই ওই ব্যবসায়ী এসে আমার কাছ থেকে মাছের আঁশ নিয়ে যান।”

প্রথম প্রথম মাছের আঁশ শুকানোটাকে পাগলামির চোখেই দেখেছিলেন এলাকার লোকজন। কটু কথা আর নানা তিরস্কার শুনেও মাহবুব তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অটুট ছিলেন। ধীরে ধীরে দিন যত গড়িয়েছে, মাহবুব তার লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। এখন ব্যবসায় খুব ভালো সময় যাচ্ছে তার। কেউ এখন আর তাকে তিরস্কার করে না বলে জানিয়েছেন মাহবুব।

এখন ৬ জন শ্রমিক মাছের আঁশ সংগ্রহ, ধোয়া এবং শুকানোর কাজে নিয়োজিত থাকলেও স্বপ্নবাজ যুবক মাহবুবের লক্ষ্য আরও সুদূর। তার মাছের আঁশের ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে বৃদ্ধি করে অন্তত ১০০ জন বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছেন। যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পেলে ফেলনা মাছের এসব আঁশ হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। সৃষ্টি হতে পারে বিশাল কর্মক্ষেত্র। এমনটাই স্বপ্ন দেখেন মাহবুব।

কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, “যারা এই মাছের আঁশ সংগ্রহের কাজে জড়িত তাদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে মৎস্য বিভাগ বা অন্য সহযোগী সংস্থা হতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দিলে এই খাতে অনেকেই উদ্যোগী হবেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।”