ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে ভাইরাসজনিত ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।
এই রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে গুটি বের হতে দেখা যায়। পরে গায়ে প্রচণ্ড ব্যথায় গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন খামারি ও গরু পালনকারীরা। এদিকে রোগটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৯৪ হাজার ৩৪০টি গরু রয়েছে। তার মধ্যে অনেক গরুর শরীরের ফোসকা পড়ছে। কোনো গরুর পা ফুলে যাচ্ছে, কোনো গরুর গলায় ঘা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের মতে, এসব লক্ষণ লাম্পি স্কিন ডিজিজের। ক্ষুরা রোগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর লাম্পি স্কিন ডিজিজ। সাধারণত শরতের শুরুতে ও বর্ষার শেষে মশা-মাছির মাধ্যমে এই রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করে। মশা-মাছি এবং খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ভাইরাসজনিত এ রোগটি বেশি ছড়ায়।
রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সবুর আলম ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বুলু বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গরু পালন। প্রতিটি বাড়িতেই এখন গরু পালন করা হয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরু পালনে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে। পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু নতুন এই রোগের কারণে শঙ্কিত গরু পালনকারীরা।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা, খামারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ রোগটি সাধারণত মশা-মাছির বিস্তারের সময় ব্যাপক আকার ধারণ করে। মশা-মাছির ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। টিকা দিয়ে আক্রান্ত থেকে গরুকে রক্ষা করা যায়। আক্রান্ত হওয়ার পর আক্রান্ত গরু আলাদা ও মশারির ভেতর রাখা জরুরি।
উপজেলার জয়কৃষ্টপুর গ্রামের খামারি আব্দুর রহমান বলেন, “সপ্তাহখানেক আগে আমার খামারের দুটো গরু অসুস্থ হয়। পরে পশু চিকিৎসক ডাকা হলে তারা ইনজেকশন ও ওষুধ দিয়েছে। গরু ভালো হওয়ার পথে।”
দানাজপুর গ্রামের কৃষক করিমুল ইসলাম বলেন, “আমি রোগাক্রান্ত দুটি গরুকে প্রথম থেকে আলাদা রাখলেও আমার খামারে থাকা আরেকটা গরুর গায়েও দুদিন আগে গুটি বের হতে শুরু করেছে। আক্রান্ত পশুকে আমি আলাদা রাখছি।”
এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণী স্বাস্থ্য) এস.এম.এ. আজম বলেন, “লাম্পি স্কিন ডিজিজ আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার খুবই কম, মাত্র ০.৫ শতাংশ।”