রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মায় ভেসে যাওয়া ১৬টি মহিষ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা উদ্ধার করেন। পরে কাস্টমসে ১৬টি মহিষের মধ্যে জমা দেওয়া হয় ১৫টি। মহিষগুলোর মালিক মো. সেন্টু নামের এক কৃষক। কিন্তু তার দাবি অগ্রাহ্য করে এই ১৫টি মহিষ প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নিলামে নিজের মহিষগুলো কেনেন কৃষক সেন্টু।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেন্টু যখন মহিষগুলো বাড়ি নিয়ে যান, তখন বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরেই মহিষগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় মহিষগুলো নিজেরাই পথ চিনে বাড়ি চলে যায়।
সেন্টুর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নীলবোনা গ্রামে। তিনি জানান, পদ্মার চরে বাথানে রেখে তিনি মহিষ পালন করেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাথান থেকেই নদীতে নেমে যায় তার ১৬টি মহিষ। পরে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর বিজিবি মহিষগুলো উদ্ধার করে। এই মহিষ যে তার, সেটি বিজিবির কাছেও হিসাব আছে বলে জানিয়েছেন সেন্টু।
সেন্টু জানান, সীমান্ত এলাকা বলে কার বাড়িতে কয়টি গরু-মহিষ আছে, তার হিসাব রাখে বিজিবি। দুটি খাতায় তা লিখে রাখা হয়। একটি খাতা থাকে মালিকের কাছে, অন্যটি বিজিবির স্থানীয় ক্যাম্পে। গরু-মহিষের হিসাব ক্যাম্প কমান্ডার লিখে রাখেন তার স্বাক্ষরসহ। তার খাতার ক্রমিক নম্বর-২৯। এই খাতায় তার ২১টি মহিষ থাকার হিসাব আছে। ৮ সেপ্টেম্বর যখন তিনি দেখেন ১৬টি মহিষ হারিয়ে গেছে, তখন বিজিবি ক্যাম্পকে অবহিত করেই খুঁজতে বেরিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি অভিযোগও করেছিলেন। ৮ সেপ্টেম্বর খবর পান, রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর বিজিবি ক্যাম্প কিছু মহিষ উদ্ধার করেছে। তিনি সেখানে গিয়ে মালিকানা দাবি করেন। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। একই দিন দুপুরে বাঘার আলাইপুর বিজিবি ক্যাম্পে আরও কিছু মহিষ উদ্ধারের খবর পান। তিনি সেখানেও যান। কিন্তু দুই ক্যাম্প থেকেই তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
সেন্টু আরও জানান, বিজিবির দুই ক্যাম্প থেকে মহিষগুলো বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। এরপর নিলামে বিক্রির জন্য বিজিবি সেগুলো কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গুদামে পাঠায়। সেন্টু সেখানে গিয়েও মহিষগুলোর মালিকানা দাবি করে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন জানান। মহিষগুলো যে তার সে ব্যাপারে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল প্রত্যয়নও দেন। এরপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত শেষে মতামত দেয়, এই মহিষ সেন্টুর নয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার হাসনাইন মাহমুদ। সদস্যসচিব সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহাফুল ইসলাম। সদস্য ছিলেন বিজিবির রাজশাহীর সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার কৌশিক আহমেদ এবং কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা ছাবেদুর রহমান।
হাসনাইন মাহমুদ ও কৌশিক আহমেদের উপস্থিতিতে বুধবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর দাসপুকুরে শুল্ক গুদামে ১৫টি মহিষের প্রকাশ্যে নিলাম শুরু হয়। সেদিন ৮টি মহিষ নিলাম দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
পরে বুধবার দুপুরে আবার ৭টি মহিষ নিলামে বিক্রি করা হয়। প্রথম দিন যারা মহিষগুলো কিনেছিলেন, তাদের কিছু টাকা লাভ দিয়ে আবার সেগুলো কিনে নেন সেন্টু। দ্বিতীয় দিন তিনি নিজেই নিলামে অংশ নিয়ে মহিষ কেনেন। মোট ১৫টি মহিষ কিনতে সেন্টুকে গুনতে হয় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। এসব টাকা তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন বলে দাবি করেছেন। এছাড়া একটি মহিষ উদ্ধার করা হলেও নিলাম দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ তুলেছেন।
তবে কৃষক সেন্টুর বাড়িতে পালা মহিষ নিলাম করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কার্যালয়ের রাজশাহীর যুগ্ম কমিশনার এবং তদন্ত কমিটি ও নিলাম কমিটির আহ্বায়ক হাসনাইন মাহমুদ। তিনি বলেন, “সুজন আলী নামের আরও এক ব্যক্তি সাতটি মহিষের মালিকানা দাবি করেছিলেন। তাই তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তে দেখা গেছে মহিষগুলো দুজনের কারও নয়। তাই নিলামে বিক্রি করা হয়।”