খননের পর ভাঙনের কবলে ‘ভাড়ানী খাল’

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২, ১০:৩৭ এএম

বরগুনা পৌর শহর থেকে বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া পর্যন্ত খনন করা ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘ভাড়ানী খাল’ এখন শহর ও উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। জেলা সদরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি খননের পর স্রোতে উভয় পাড়ে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বরগুনা-পৌর শহরের একাংশসহ বরগুনা-বাঁশবুনিয়া-গুলবুনিয়া সড়কটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া খালের ওপর নির্মাণ করা মোট ১১টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে শহরের দুটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।  

পাউবো কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটি খননের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরিবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে কার্যাদেশ পায়। বরাদ্দকৃত এই কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট এবং নিম্নস্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯ দশমিক ৩৬ ফুট এবং গভীরতা ১ দশমিক ৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬ দশমিক ৫০ ফুট। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খালটি খননের কাজ শেষ হয়। খননের ফলে খালটিতে অবাধে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ শুরু হওয়া মাত্র তিন মাসের মধ্যেই উভয় পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আষাঢ় শ্রাবণের বৃষ্টি ও জোয়ারের তোড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে বরগুনা শহরের মাদ্রাসা ও জেলা পরিষদ সেতু দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে সেতুতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাল খননের ফলে পিলারের নিচের মাটির ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। স্রোতে তোড়ে মাটি ভেসে গিয়ে একইভাবে শহরের মাছ বাজার থেকে শুরু করে গুলবুনিয়া পর্যন্ত মোট ১১টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া খালের পশ্চিম পাড়ের বরগুনা-চালিতালী সড়কের পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়ক থেকে শুরু করে খাদ্যগুদাম হয়ে জেলা স্কুল ও বাঁশবুনিয়া এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের একাংশ ভেঙে খালে পড়েছে। পূর্ব পাশের শহীদস্মৃতি সড়ক হয়ে মাইঠা, লবণগোলা থেকে গুলবুনিয়া পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে রয়েছে খালের পাড়ের বেশ কিছু স্থাপনা।

বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাফিজ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “জোয়ার-ভাটার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে অপরিকল্পিতভাবে খালটি খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবিধার জন্য খনন করা হলেও এখন সেই খননই উভয় পাড়ের বাসিন্দাদের বসতিসহ স্থাপনা, উভয় পাড়ের সড়ক ও ১১টি সেতুর জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। দ্রুত উভয় পাড়ে সুরক্ষা বাঁধ স্থাপন না করলে সড়ক, সেতু ও পাড়ের বসতিসহ অনেক স্থাপনা খালের পেটে চলে যাবে।”

বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানির হোসেন কামাল বলেন, “অনেক আন্দোলনের পর খালটি দখলমুক্ত করার পর অপরিকল্পিতভাবে খননের পর এখন ভাঙনের শিকার হচ্ছে সড়ক, স্থাপনা পারাপারের জন্য সেতু। খালটি খননের সময় মাছ বাজার থেকে বাঁশবুনিয়া পর্যন্ত সুরক্ষা বাঁধ স্থাপন করা হলে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি উভয় পাড় সুরক্ষিত থাকত।”

বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা আন্দোলন করেছি, খাল দখলমুক্ত হয়েছে এবং খননের কাজও শেষ। কিন্তু এখন যে অবস্থা, খাল কেটে কুমির আনা হয়েছে। উপকার হয়েছে, কিন্তু যে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা থেকে সুরক্ষা দিতে পাউবোর ভূমিকা রাখতে হবে। দ্রুত খালের উভয় পাড়ে সুরক্ষাপ্রাচীর নির্মাণ করে বাঁধ স্থাপন না করলে হুমকির মুখে পড়বে, সড়ক ব্রিজ ও এলাকার বাসিন্দাদের বসতি।”

বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, “ইতোমধ্যে পৌর শহরের দুটি ব্রিজ ঝুঁকিতে থাকায় বন্ধ করা হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর সঙ্গে আলাপ করেছি। ওনারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা পাউবোকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”

পাউবো বরিশাল বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করা যায় না। বরগুনায় ৫টি প্রকল্প অনুমোদন চাওয়া হলেও ২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। খাকদন নদী ও ভাড়ানী খালের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করে অনুমোদন প্রস্তাব করা যেতে পারে।”