শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপে মণ্ডপে বাদ্যযন্ত্র, ঢাকঢোলের শব্দ আর ধূপের গন্ধে মেতে ওঠে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন। এ বছর রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গাপূজা সামনে রেখে শেষ সময়েও ঢাকঢোল মেরামতের তেমন কোনো কাজ নেই বলে জানান কারিগররা।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী নগরীর সিএনবির মোড়ে আসু বাবু ও পবা উপজেলার নওহাটা বাজারের তেঁতুলতলা মোড়ের চন্দন দাসের দোকানে ঘরে দেখা গেছে, নেই তেমন ঢাকঢোল তৈরি বা মেরামতের কাজ। তারা ঐতিহ্য ধরে রেখে তাদের পূর্বপুরুষের পেশা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকঢোল মেরামত বা তৈরির কোনো কাজ নেই। কারিগররা জানান, পূজাতে ঢাকঢোলের বাজনা অপরিহার্য। কারণ, হিন্দুশাস্ত্রেও এর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। তাই ঢাকঢোল ছাড়া পূজা-অর্চনার কথা ভাবাই যায় না। তবে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির আধিক্যে ঢাকঢোলের বাজনা কমে যাচ্ছে। এখন যে দুই একটি ঢাকঢোলের কাজ হয় তাতে কাঠ, চামড়াসহ ঢাকঢোল তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন খুব একটা লাভ হয় না।
পবা উপজেলার নওহাটা বাজার তেঁতুলতলা মোড়ের ঢাক তৈরির কারিগর চন্দন দাস (৪৫) বলেন, “বংশপরম্পরায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আমি এ পেশায় আছি। আগের দিনের মতো এখন আর ঢাক ও ঢোলের তেমন চাহিদা নেই। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢাকঢোল, খোল ও তবলা। তবে পূজা উপলক্ষে ঢাকঢোলের চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়। বড় আকারের প্রতিটি ঢাক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ছোট ও মাঝারি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি করা হয়।”
চন্দন দাস আরও জানান, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মাত্র ৬-৭টি ঢোল মেরামতের জন্য পেয়েছেন। কাজে চাপ একেবারেই কম।
একাধিক কারিগর জানান, গানবাজনা, যাত্রানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান কম হওয়ায় দিন দিন ঢোলের চাহিদাও কমে যাচ্ছে। তাই সংসারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। যে কারণে এ কাজে কারিগররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
তারা আরও জানান, আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কারণে উৎসব-অনুষ্ঠানে এখন আর ঢোলের তেমন কদর না থাকলেও পূজা-পার্বণে এখনো ঢাকঢোলের কদর রয়েছে। পূজার আরতিতে ঢোলের কোনো বিকল্প নেই। তাই বছরের এ সময়টাতে ব্যস্ত সময় পার করেন ঢুলি থেকে শুরু করে ঢোল ও খোল তৈরির কারিগররা। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো মেরামতের কাজ নেই। বসে বসে সময় পার করছেন কারিগররা।
রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মো. ওয়াজেদ আলী খান বলেন, “পূজার সানাইয়ে মন কেমন করে ওঠে। শুধু সানাই নয়, জোড়া কাঠিতে ঢাক কিংবা কাঁসরের ওপর একটানা একটি কাঠির তিনটি শব্দ-সুরের যে মূর্ছনা সৃষ্টি করে এসেছে তা বাঙালির একান্ত নিজের সুর। এ সুরের ইন্দ্রজাল ছিঁড়ে আমাদের বাঙালির গানে প্রবেশ করেছে গিটার, প্যাডড্রাম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। যার প্রভাবে আমাদের ঢাকঢোল এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।”