সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর শিল্পীরা।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯ উপজেলায় ৪৫০টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী মহানগরীতে পূজামণ্ডপ ৭৬টি, বাগমারায় ৮০টি, দুর্গাপুরে ১৭টি, বাঘায় ৪৬টি, চারঘাটে ৪০টি, তানোরে ৬০টি, গোদাগাড়ীতে ৩৯টি, পুঠিয়ায় ৫২টি, পবায় ১৮টি ও মোহনপুর উপজেলায় ২২টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী নগরীর গণকপাড়া বৈষ্ণব সভা মন্দির প্রতিমা তৈরির কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, অরুণ পালের কারখানার শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। কেউ দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড় আবার কেউ ব্যস্ত প্রতিমার গায়ে কাঁদা মাটির প্রলেপ লাগাতে।
অরুণ পাল বলেন, “আমি প্রায় ২২ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। সামনে ৩০ সেপ্টেম্বর পঞ্চমী। পঞ্চমীর রাতের আগেই আমাদের প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা এখন খুব ব্যস্ত। বাংলা আষাড় মাসের ১ তারিখ থেকে প্রতিমা শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।”
অরুণ পাল আরও বলেন, “এ বছর ২৬টি প্রতিমা তৈরি করছি। এগুলোর মধ্যে শহরের জন্য ২২টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। বাকি ৪টির অর্ডার পেয়েছি শহরের বাইরে থেকে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে কাছ শুরু করি কাজ চলে একটানা ভোর ৪টা পর্যন্ত। প্রতিমা তৈরির জন্য আমরা কারখানাতে ৮ জন কাজ করি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার উপায় থাকে না। খাওয়া দাওয়ারও কোনো ঠিক নাই।”
প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিন্ম ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতি পৌন আউরে খরচ হয় পাঁচশত টাকা থেকে ছয়শত টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেক ৫ হাজার টাকার মতো।
একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।
পবা উপজেলার বসন্তপুর বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, শিল্পী সুবোধ কুমার পাল প্রতিমা তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, “এটা ছাড়াও আরও দুইটি প্রতিমার অর্ডার নিয়েছি। এ বছর তিনটি প্রতিমা তৈরির কাজ করছি।”
পূজা উদযাপন পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি অম্বর সরকার বলেন, “এ বছর রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ৪৫০টি পূজামণ্ডপে পূজা হবে। এ জন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।”
মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেড শরৎ সরকার বলেন, “এ বছর নগরীতে ৭৬টি স্থানে পূজামণ্ডপ নির্মাণ করা হবে।”
জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটির দুই সভাপতি বলেন, “পূজার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। সকল প্রকার আইনী সহযোগিতা প্রদান করা হবে।”
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) বলেন, “দুর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ-র্যাব সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।”