পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে সালমান। অসুস্থ মা-বাবার চিকিৎসা আর সংসারের খরচ বহন করতে হয় তাকে। সালমানের বয়স মাত্র ১২ বছর। এই বয়সে হাল ধরেছে পরিবারের। প্রতিদিন মা-বাবার জন্য সর্বনিম্ন ৫০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয় তাকে। সংসারের খরচ ও ওষুধ কিনতে হয় ভাড়ার একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি চালিয়ে। আর সেই ভ্যানটি চুরি করে নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর থেকেই গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের সামনে বসে বুকফাটা আহজারি যেন থামছেই না সালমানের।
সালমান টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে দুইজন লোক তার ভ্যানটি ভাড়া নেয়।
সালমানকে বলা হয়েছিল গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে থেকে ভ্যানে করে সিলিন্ডার নিয়ে আসতে হবে। সদর হাসপাতালে আসার পর দুজনের মধ্যে একজন ১২০ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট বিরিয়ানি এনে দিতে বলে সালমানকে। সে আনতে গেলে ওর ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়। সালমান এসে দেখে তার ভ্যান ও সেই দুজন ব্যক্তি নেই।
কান্না বিজড়িত কণ্ঠে সালমান বলে, “সদর হাসপাতালে পৌঁছালে ওই দুইজন নানা বাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে আমাকে ১২০ টাকা দিয়ে বিরিয়ানি আনতে দিয়ে আমার ভান নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়।”
সালমান আরও বলে, “আমার কোনো বড় ভাই নাই। মা-বাবা দুজনের অসুস্থ। ভ্যান চালিয়ে মা-বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাতে হয়। প্রতিদিনের বাজারের খরচ টানতে হয়। আমি এখন কীভাবে রোজগার করব।”
ছেলের ভ্যানটি হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনে সদর হাসপাতালে সামনে ছুটে যান অসুস্থ মা।
সালমানের মা বলেন, “সকাল হলে আমাগো কিস্তি আছে। আমরা এহন কী করবানি। আমাগে সংসারই চলতো এই ভ্যান দিয়ে। এহন কী করবানি। আমরা এহন কি খাইয়ে বাচবানি। আমাগে তো কেউ নাই। আমাগে কে দেখবে এহন। আরেকটা ভ্যান কিনার টাকা কই পাবো।”
এ বিষয়ে স্থানীয় এক সেচ্ছ্বাসেবী এম আরমান খান জয় বলেন, “আমরা খবর পেয়ে এসে দেখি ছেলেটির ভ্যান হারিয়ে আহাজারি যেন থামছেই না। দেখে খুবই খারাপ লাগছে এতোটুকু একটা বাচ্চা পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তার ভ্যানটি কীভাবে নিয়ে যায়, এদের একটু খারাপ লাগলো না। আমাদের পক্ষ থেকে ছেলেটিকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করব।”