এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন দহগ্রামবাসী

এস. কে. সাহেদ, লালমনিরহাট প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২, ০৮:১৯ এএম

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বহুল আলোচিত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ইউনিয়নের বাসিন্দারা গত বছরের বন্যার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি সেতু ও ১০টি আঞ্চলিক সড়ক মেরামত না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দহগ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। সেতু ও সড়কের অভাবে দেশের মূল ভূখণ্ডে চলাচল করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।

গত বছর উজানের ঢলে তিস্তার নদী প্রবল স্রোতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ইউনিয়নে বন্যা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ইউনিয়নের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমি, চলাচলের সড়ক, সেতু ও বৈদ্যুতিক একাধিক খুঁটি।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে সাকোয়া নদী বয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিভক্ত। অপরদিকে পূর্ব-পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ লাগোয়া অংশ হয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দহগ্রামের অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। সাকোয়া নদী ভারতের মেখলিগঞ্জ থেকে দহগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। তিস্তায় বন্যা দেখা দিলে সাকোয়া নদীও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। গত বছরও আকস্মিক বন্যায় দহগ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৃষ্টিয়ারপাড় এলাকার সাকোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়ক ধসে যায়। একই ওয়ার্ডের সর্দারপাড়া তিস্তা নদীর ক্যানেলের ওপর নির্মিত সেতুর দুই দিকে ফাটল ধরে। এতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে মানুষ। একই ওয়ার্ডের কলোনিপাড়া থেকে দাখিল মাদ্রাসাগামী ৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২ নম্বর ওয়ার্ডের ওলেরপাড়, ডাঙাপাড়া এলাকা হয়ে শেষ পর্যন্ত (ভারত-বাংলাদেশ শূন্যরেখা পর্যন্ত) সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমবাড়ী মহিমপাড়া এলাকার কালভার্ট ভেঙে গেছে। দহগ্রামের নয়ারহাটগামী পাকা রাস্তা থেকে গুচ্ছগ্রামে যাওয়ার দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি বৃষ্টি, বন্যা, খরা সব মৌসুমেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে থাকে। বৃষ্টি আর বন্যায় সড়কটির অনন্ত ৮-১০ জায়গায় ভেঙে গেছে। সড়কে কালভার্টটিও ভেঙে গেছে। সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ায় বেশ কষ্টে চলাচল করছেন এখানকার বাসিন্দারা। ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বঙ্গেরবাড়ী থেকে নতুনহাট এলাকায় সাকোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির রেলিং ভেঙে গেছে। ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর দিকের সংযুক্ত পাকা সড়কও ভেঙে গেছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাড়িপাড়া-সৈয়দপাড়া সাকোয়া উত্তরদিকের অংশ দেবে গেছে। এছাড়া ওই ওয়ার্ডের সৈয়দপাড়া থেকে হাবিব চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়কে বন্যা, বৃষ্টিতে গর্ত ও নষ্ট হয়েছে। ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সংযুক্ত এলাকার কাজীপাড়া-মমিনপুর মাদ্রাসা এলাকার সাকোয়া নদীর ওপর সেতুটির দুই দিকের সংযোগ সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অচলাবস্থায় রয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাতিপাড়া থেকে মতিয়ারের বাড়ি পর্যন্ত কাবিখার সড়ক দেবে গেছে।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গোলাম রব্বানী জানান, প্রতিবছর তিস্তার আকস্মিক বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়ে দহগ্রাম ইউনিয়নের হাজারো কৃষক। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও ফসলি জমি। দেশের বহুল আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতের জন্য জোর দাবি জানান তিনি।

দহগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, বন্যায় এ ইউনিয়নের পাকা ও কাঁচা রাস্তা, সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে ইউনিয়নবাসী। সড়ক ও সেতু সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মাহাবুব-উল আলম বলেন, “গত বছরের আকস্মিক বন্যায় দহগ্রাম ইউনিয়নের যে সকল সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।”

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, গত অর্থবছরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট দ্রুতই মেরামত করা হবে। ব্রিজ-কালভার্টগুলো এলজিইডি করবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে দহগ্রাম ইউনিয়নে অবকাঠামো সংস্কার করা হবে।