ভোজনবিলাসীদের প্রিয় পুরি-আলুর ডাল

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

কুড়িগ্রামের ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবার পুরি-আলুর ডাল। যা জেলা শহরের পুরাতন শহরেই দেখা মিলবে ঝন্টু মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এটি কুড়িগ্রাম জেলার আদি মিষ্টির দোকান। প্রতিদিন বিকেলে এই পুরি-আলুর ডাল খেতে ভিড় জমান শহরের বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও দোকানটির বর্তমান কর্ণধার স্বপন বণিকের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৩৯ সালে সুরেন্দ্রলাল বণিকের হাতে তৈরি এই দোকানটি। চা-বিস্কুট দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে মিষ্টির বাজারে ঐতিহ্য বহন করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তাদের ‘স্পেশাল আইটেম’ পুরির সঙ্গে আলুর ডাল, যা স্থানীয় ও বহিরাগত ভোজনবিলাসীদের কাছে অতি জনপ্রিয়।

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র কালীবাড়ি এলাকায় ঐতিহ্যের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। সুরেন্দ্রলাল বণিক ও মালতি বণিকের বড় ছেলে ঝন্টু লাল বণিক। পরিবারের সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। ১৯৫২ সাল, চারদিকে মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চলছে। এ অবস্থায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরেন তিনি। শুরু করেন বাবার দেওয়া ছোট্ট চা-বিস্কুটের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। পরে ছোট্ট টিনশেডের এই চায়ের দোকানটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে ঝন্টু দার চায়ের দোকান নামে। মাঝপথে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঝন্টু দার চায়ের দোকান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফের চালু হয় ঝন্টুর চায়ের দোকান। পরে যার হাল ধরেন ঝন্টু লাল বণিকের ছোট ভাই স্বপন লাল বণিক। তিনি চা-বিস্কুটের পাশাপাশি বিক্রি শুরু করলেন পুরির সঙ্গে আলুর ডাল। সেই মুখরোচক সাধারণ আলুর ডাল ও পুরি ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠল অসাধারণ রসনা। সুস্বাদু এই খাবারের জন্য ক্রমেই ঝন্টুর চায়ের দোকান থেকে ‘ঝন্টুর দোকান’ নামে পরিচিত হয়ে উঠল। পরে বিভিন্ন মজাদার মিষ্টি বানিয়ে বিক্রি হতে থাকে দোকানটিতে।

১৯৮৬ সালে দোকানটি বিভক্ত হয়ে যায় দুটি নামে। একটি দীপা মিষ্টান্ন ভান্ডার, অন্যটি ঝন্টু মিষ্টান্ন ভান্ডার। বর্তমানে দুটি দোকানেই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন মুখরোচক তেলে ভাজা ও দুধের তৈরি নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। পুরোনো আলুর ডাল ও পুরি পাওয়া যায় দুপুরের পরে।

কালীবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক সফি খান বলেন, “ঝন্টুর দোকানের পুরি আর আলুর ডালের খ্যাতি এলাকা ছাড়িয়ে বিদেশেও চলে গেছে। অনেক কিছু খেলেও এই খাবার না খেলে তৃপ্তি মেটে না। প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি কুড়িগ্রাম জেলায় আজও ঐতিহ্যের ধারক।”

সদরের পাঁছগাছি এলাকা থেকে খেতে আসা জুয়েল রানা বলেন, “শহরের পুরোনো এই দোকানে আমি প্রায়ই পুরি-আলুর ডাল খেতে আসি। মাঝেমধ্যে এর স্বাদ একটু অন্য রকম পাই, তবে ভালোই লাগে।”

ঝন্টু মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী স্বপন বণিক বলেন, “আমাদের এই দোকানটি জেলা শহরের আদি মিষ্টির দোকান। আমাদের মিষ্টির যেমন খ্যাতি তেমনি বিকেলের পুরি-আলুর ডালও খুব জনপ্রিয়।”