পাঠাগারের খোঁজে—২

পাঠক কমছে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে

রিজাউল করিম, সাতক্ষীরা প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৮:২১ এএম

ক্রমেই পাঠক কমছে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে। প্রয়োজনীয় সব ধরণের ব্যবস্থা থাকলেও গণগ্রন্থাগারমুখী হচ্ছে না মানুষ।

সরজমিনে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা ১১টার দিকে সাত থেকে আটজন পাঠক বই পড়ছেন। যেখানে এক সঙ্গে ১০৫ জন পাঠকের বসে বই পড়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।

পাঠকদের তদারকির জন্য স্টাফ রয়েছে তিনজন। গণগ্রন্থাগারের আলমারিগুলোতে অলস পড়ে আছে নানা প্রকারের বই। তবে, গণগ্রন্থাগারে পাঠক কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বইপত্রের ডিজিটাল ভার্সন সহজলভ্য হওয়াকে যেমন দায়ী করা হচ্ছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তিকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকৃত পাঠকরা গণগ্রন্থাগারে না আসলেও পড়া থেকে পিছিয়ে নেই। তারা এখন অনলাইনেই প্রয়োজনীয় সব বই পড়তে পারছেন। অনেক ক্ষেত্রে যেসব বই মফস্বলের গণগ্রন্থাগারে পাওয়া যায় না, সেসব বইও পড়তে পারছেন।

অনেকে মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তির কারণে অনেকে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের মধ্যে বই পড়া অভ্যাস গড়ে উঠছে না।

গণগ্রন্থাগার কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড না থাকাকেও ‘গণগ্রন্থাগারে শূন্যতা’ সৃষ্টির জন্য দায়ী করছেন কেউ কেউ।

পাঠক আল-আমিন বলেন, “আমরা গণগ্রন্থাগারে এসে সব ধরনে বই পাই না। এছাড়া এখানে একাডেমিক কোনো ধরনের বইপত্র নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাহলে গণগ্রন্থাগারে এসে আমাদের লাভ কী? আর বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে এখানে অন্ধকার হয়ে যায়। বিকল্প আলোর ব্যবস্থা নাই।”

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মো. আনিসুর রহিম বলেন, “বর্তমানে অনেকেই অনলাইনে বই পড়ছেন। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে লাইব্রেরিতে গিয়েও অনেকে প্রয়োজনীয় বই পান না, কিন্তু সেসব দরকারি বই অনলাইন থেকে কিনে নিচ্ছেন, বা পড়তে পারছেন। তবে, যারা গবেষণাধর্মী কাজ করে তাদের জন্য লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। আবার, অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, যেটা ক্ষতিকর। সে হিসেবে বাধাই করা বই-ই সবার জন্য শ্রেয়। এজন্য লাইব্রেরিতে যাওয়া দরকার, পরিকল্পিত উপায়ে তরুণদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার দরকার।”

কবি ও প্রাবন্ধিক শুভ্র আহমেদ বলেন, “গণগ্রন্থাগারে বর্তমানে যে বইগুলো রয়েছে বা পাঠকরা বাসায় নিয়ে পড়ছেন তাতে পাঠকদের হচ্ছে না। এক সময় বই পড়ে পাঠকরা জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিনোদন পেতেন। এখন জ্ঞান ও বিনোদনের জন্য পাঠকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবের মধ্যে থেকে সবকিছু পাচ্ছেন। যার কারণে লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। পাঠকদের লাইব্রেরিমুখী করতে হলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। যেখানে পাঠকরা এসে অংশগ্রহণ ও তাদের পছন্দের বই পাবেন, কথা বলতে পারবে। তাহলে আগের মত লাইব্রেরিতে পাঠক আসবে।”

সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ বলেন, “করোনায় দীর্ঘদিন ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে পাঠকরা ঘরবন্দী ছিলেন। এজন্য সেই সময় অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। এছাড়া জেলাতে গণগ্রন্থাগার রয়েছে, এটা অনেক পাঠক জানে না। এটা প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে পাঠকদের জানাতে হবে। জেলা গণগ্রন্থাগারকে ডিজিটাল রূপে রূপান্তর করতে হবে। তাহলে পাঠকরা আগের মত গণগ্রন্থাগারমুখী হবেন।”

সার্বিক বিষয় নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সরকারি লাইব্রেরিয়ান মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে গণগ্রন্থাগারে পুস্তক রয়েছে ৩ হাজার ৩৫২টি। পত্রিকা নেওয়া হয় ১১টি। বাংলা সাময়িকী ১০টি ও ইংরেজি সাময়িকী নেওয়া হয় ২টি। এছাড়া আমাদের এখানে পাঠকদের জন্য তিনটি কম্পিউটার ও ফ্রি ইন্টারনেট রয়েছে। আমাদের নিয়মিত পাঠক সদস্য ১১০ জন। এখানে বছরে ৭টি দিবস পালন করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “গণগ্রন্থাগার শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া আমাদের ৮ জন স্টাফ এর জায়গায় ৩ জন রয়েছি। গণগ্রন্থাগারের সৌরবিদ্যুতের লাইনটি নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে আরও পাঠক সংখ্যা বাড়বে।”

আরও সংবাদ