৩০ শিক্ষার্থীকে রোদে ৪০ মিনিট দাঁড় করিয়ে নির্যাতন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ০৯:৫১ পিএম

পড়া মুখস্ত না করায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ৩০ শিক্ষার্থীকে রোদে ৪০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীদের বাবা-মা ও অভিভাবকেরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জেলার পাটগ্রাম পৌরসভার সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন নাহার ৩০ আগস্ট পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বইয়ের দুই পৃষ্ঠা পড়া মুখস্ত করে পরদিন বিদ্যালয়ে আসতে বলেন। ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীরা মুখস্ত পড়া দিতে না পারলে উপস্থিত ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। ওই বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষের বাইরে প্রায় ৪০ মিনিট কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন শিক্ষক। স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনা বাবা-মা ও অভিভাবকদের জানালে শিশুদের আর বিদ্যালয়ের পাঠাবেন বলে জানিয়ে দেন। এ ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে অভিভাবকদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। অভিযোগের অনুলিপি রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরেও প্রদান করেন তারা।

ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবণ্য আক্তার বলে, “ক্লাসে আপা এসে পড়া চায়। এতগুলো পড়া মুখস্ত দিতে পাইনি। এজন্য কান ধরে দাঁড় করে রাখেন। স্কেল দিয়ে আমাকে, বৈশাখী, সুমাইয়া, হাবিবা, মাইশা, হুসনুত ও সাইয়্যেদাকে পেটানো হয়েছে। এ রকম করায় বৃহস্পতিবার আমরা কেউ বিদ্যালয়ে যাইনি।”

অভিযোগে স্বাক্ষরকারী অভিভাবক ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুহ্ ইসলামের বাবা রুহুল আমিন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শিশুদের সোহাগ দিয়ে পড়াতে, কিন্তু এটা না করে বাচ্চাদের তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। এজন্য লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি। 
তাছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো বিষয়ে গেলে অভিভাবকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন নাহার বলে অভিযোগ করেন রুহুল আমিন।

রুহুল আমিন আরও বলেন, “বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি ৫ম শ্রেণির কোনো ছাত্র-ছাত্রী ক্লাসে নেই।”

জান্নাতুন নাহার বলেন, “একটা পড়া পাঁচ দিন থেকে বাচ্চাদের পড়াচ্ছি। প্রশ্ন দিয়েছি, পরপর পড়াচ্ছি কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তখন বাচ্চাদের প্রশ্ন করি কেন পড়া হচ্ছে না- তখন সবাই একসঙ্গে বলল মার দিতে। আমি বলছি মারা যাবে না। তারাই বলল কান ধরি। আমি কান ধরিয়ে বারান্দায় ১০ মিনিট রেখেছি মাত্র।”

প্রধানশিক্ষক আনোয়ারুল কবির বলেন, “বুধবার তো বেশি রোদ ছিল না। বারান্দায় কিছু সময় শিক্ষার্থীদের দাঁড় করে রেখেছিলেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন নাহার। তবে তিনি ভুল স্বীকার করেছেন।”

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) আবুল হোসেন লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, “তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”