পাহাড়ি নারীদের হাতে বোনা বেল্ট যাচ্ছে দুবাই

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ১০:২৭ এএম

পাহাড়ের নারীদের হাতে বোনা উটের গায়ে ব্যবহৃত বিশেষ বেল্ট যাচ্ছে দুবাইয়ে। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক পাহাড়ি নারী দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এই কাপড় সরবরাহ করে যাচ্ছেন। তারা হাতে বোনা এসব কাপড় স্থানীয় এক মহাজনের মাধ্যমে দুবাই বিক্রি করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ৩ নম্বর ঘাগড়া ইউনিয়নের জুনুমা ছড়া গ্রামটিতে অধিকাংশ লোক কৃষিকাজের পাশাপাশি হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত। ওই গ্রামের বাসিন্দা মিকা দেওয়ান। ২০০৬ সালে দুবাইয়ের এক প্রবাসীর অনুরোধে উটের গায়ে ব্যবহৃত বিশেষ বেল্ট তৈরির কাজ শুরু করেন। এর চাহিদা থাকায় তার দেখাদেখি একই কাজ শুরু করেন আরও অর্ধশতাধিক পাহাড়ি নারী। তারা স্থানীয় এক মহাজনের মাধ্যমে এসব কাপড়ের বেল্ট সংগ্রহ করে দুবাই প্রবাসীর কাছে পাঠান।

পাহাড়ি নারীরা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে এলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মজুরি না বাড়ায় পরিশ্রমের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব কাপড় বা বেল্ট তৈরি সময়সাপেক্ষ ও কষ্টের। এক সেট বেল্টের মধ্যে ছোট-বড় সাইজের ১৫টি বেল্ট তৈরি করা হয়। এক মাসে একজন সর্বসাকুল্যে ৩ সেট বেল্ট তৈরি করতে পারেন। এতে মজুরি পান তিন হাজার টাকা। এসব কাপড় তৈরিতে পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি কম। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে পাহাড়ি নারীরা এই পেশায় জড়িত থেকে সংসারের খরচ মেটাতে পারলেও পরিশ্রম ও মজুরি কম হওয়ায় দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

মিকা দেওয়ান বলেন, “দুবাইয়ের এক প্রবাসী বাংলাদেশে এসে অনেক জায়গা ঘুরেছেন উটের কাপড় তৈরির জন্য। কিন্তু এসব কাপড় তৈরির জন্য কাউকে পাননি। শেষ পর্যন্ত  রাঙামাটিতে এসে কথা বলার পর আমি কাপড় তৈরিতে রাজি হয়েছি। এর পর থেকে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এ কাজ করে আসছি। বর্তমানে ৫০ জন নারী কাপড় তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।”

মিকা দেওয়ান আরও বলেন, “কাপড় তৈরিতে অনেক কষ্টের ও সময় সাপেক্ষ। সে ক্ষেত্রে মাসে গড় আয় হয় মাত্র ৩ হাজার টাকা। অল্প টাকা দিয়ে এখন সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই পেশা বদলানোর  কথা ভাবছি।”

সোনামিকা চাকমা বলেন, “হাতের তৈরি এই কাজ শিখেছি মিকা দেওয়ানের হাত ধরেই। তবে জীবিকা তাগিদের বেল্ট বুনলেও পরিশ্রম অনুযায়ী এখন সেই কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক পাচ্ছি না। এক সেট বেল্ট বুনে মাত্র এক হাজার টাকা পাওয়া যায়।”

ঘাগড়া ইউপির মহিলা মেম্বার মিনু রানী চাকমা বলেন, “এলাকার এসব নারী দীর্ঘদিন এই কাজ করে এলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মজুরি না বাড়ায় পরিশ্রমের মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আলোচনা করেও এখনো কোনো সহায়তা পাননি।”

রাঙামাটি জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য ঝর্ণা খীসা বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে সরকারি সহায়তার দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এখনো কিছু করে দিতে পারিনি তাদের জন্য। এ ছাড়া বর্তমানে সুতার দাম বাড়ার কারণে এখন বেল্ট বানানোর ব্যবসা করে তেমন একটা ভালো হচ্ছে না।”

রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের কর্মকর্তা দীপা তালুকদার বলেন, “ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনামূলক বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে,  সেই প্রকল্পটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে সেলাইসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে চান তারা  রাঙামাটির যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।”