ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার করার অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাশকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমনুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বুধবার (৩১ আগস্ট) সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলার শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঝুমন দাশকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে ঝুমন দাশকে তার নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। টানা প্রায় ১২ ঘণ্টা তাকে থানায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ঝুমনের ভাই নুপুর দাশ বলেন, “সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তাকে থানায় নিয়ে যায়। এর আগে দুই দিন ধরে তাকে ফলো করছিল পুলিশ। তার মোবাইল পুলিশ নিয়ে গেছে এবং কিছু পোস্ট মুছে দিয়েছে।”
নূপুর আরও বলেন, “সন্ধ্যায় ঝুমনের স্ত্রী থানায় গেলে তাকে জানানো হয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঝুমনকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মধ্যরাতে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ঝুমন দাশ ফেসবুকে একটি উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। সে কারণে নোয়াগাঁও গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এর আগে গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন।
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাশ। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। ঝুমন দাশের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির বাড়ি, মন্দির ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই এখন জামিনে।
শুধু জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাশ। বিচারিক আদালতে পাঁচ দফা তার জামিন আবেদন নাকচ করেন বিচারক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছিল। এর মধ্যে জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন ঝুমন দাশ। ছয় মাস কারাবন্দীর থাকার পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।