দুধ লিটারে ৫ টাকা বাড়লেও খামারি পাচ্ছেন ৩ টাকা!

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২, ০৬:০১ পিএম

পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে বাজারগুলোতে দুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তরল দুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানীগুলো ইতোমধ্যে লিটারে ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। খামারি পর্যায়ে ৫ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হলেও দুধ উৎপাদনকারীরা পাচ্ছেন ৩ টাকা।

এদিকে গো-খাদ্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে দুধের দাম বাড়লেও লাভ থাকছে না বলে দাবি কৃষকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে বর্তমানে আড়ং, আকিজ ও প্রাণসহ অধিকাংশ কোম্পানির প্যাকেটজাত তরল দুধ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ৯০ টাকা দরে।

খামারিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, “খামার পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ খামারি ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতাদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে রাখায় তারা কোম্পানি নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।”

পাবনা জেলা দুগ্ধ উৎপাদনকারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার-ফরিদপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, “মিল্কভিটা প্রতি লিটার দুধের দাম ৫ টাকা বাড়িয়েছে। ফ্যাটের লেভেল ৪ থাকলে বর্তমানে প্রতি লিটার দুধের দাম দিচ্ছে ৪৬ টাকা। গত মাসে দেওয়া হতো ৪১ টাকা লিটার করে। লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হলেও এর আগে লিটার প্রতি এক টাকা বোনাস ও খরচ বাবদ আরও এক টাকা দেওয়া হতো। এখন সেটা দেওয়া হচ্ছে না।”

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, “আগে ৪১ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করে পাওয়া যেত ৪৩ টাকা। এখন এক লিটার দুধের দাম ৪৬ টাকা দেওয়া হলেও অতিরিক্ত ২ টাকার সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দুধের দাম লিটারে ৫ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হলেও মূলত বেড়েছে ৩ টাকা।”

প্রান্তিক খামারিদের দাবি, তারা নির্ধারিত মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। দাদন নিয়ে রাখায় তারা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সমস্যা থেকে তারা পরিত্রাণ চান।  

পার-ফরিদপুর গ্রামের প্রান্তিক খামারি আবু সাইদ বলেন, “মিল্কভিটায় দুধ সরবরাহ করলেও নিজস্ব কোড না থাকায় সমিতির নেতাদের মাধ্যমে দুধ সরবরাহ করতে হচ্ছে। খামার পরিচালনার জন্য এর আগে সমিতির নেতাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাদন নিয়েছি। ফলে তাদের কাছে ৪৪ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে।”

আবু সাইদ আরও জানান, তার মতো একই অবস্থা ওই এলাকার অধিকাংশ প্রান্তিক খামারির। খামার পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাদন নিয়ে কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ফলে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। 
এদিকে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামার পরিচালনা খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে দুধের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা খামারিদের।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রামখারুয়া গ্রামের খামারি রাজু আহমেদ বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বস্তা খাদ্যের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমানে এক বস্তা গো-খাদ্যের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এভাবে গো-খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে গবাদি পশু পালন হুমকির মুখে পড়বে।”

পাবনা জেলা ডেইরি খামারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, “বর্তমানে তার খামারে সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার গো-খাদ্য প্রয়োজন হচ্ছে। অথচ দুধ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকার। দুধ বিক্রি করে গো-খাদ্যের খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে খামার পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের দাবি, গো-খাদ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক বা খামারি পর্যায়ে যে লোকসান হচ্ছে তা কিন্তু নয়। খোলা বাজারগুলোতে স্থান ও সময় ভেদে ৫৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গো-খাদ্যের স্বাভাবিক থাকতে ৪০/৪৫ টাকায় দুধ বিক্রি হয়েছে। সেখানে বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতি লিটার দুধে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।