সারা দেশে চলমান চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্নিদিষ্টকালের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বালিশিরা ভ্যালি, লংলা ভ্যালি, মনু-ধলাই ভ্যালি, জুড়ি ভ্যালি, লস্করপুর ভ্যালি, সিলেট ভ্যালি ও চট্টগ্রাম ভ্যালিতে আলাদাভাবে চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সংগঠনটি।
এরআগে সংগঠনটি বিকেল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেসব্রিফিং করে।
এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, বুধবার ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশিয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিপক্ষীয় সভায় মালিকপক্ষ আমাদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার জন্য বলেছিলেন। আমরা সেখানে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলে এসেছিলাম, আমাদের মাঠ পর্যায়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। আজ আমরা আমাদের সারা দেশের ৭টি ভ্যালিতে আলাদাভাবে আলোচনা করেছি। কেউ এই প্রস্তাবে রাজি নন। কেন্দ্রীয় কমিটি সব বিষয় বিবেচনা করে মালিকপক্ষের এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করছি। আমাদের যে কর্মসূচিগুলো চলছে, সেগুলো আমরা অব্যাহত রাখব। আমরা সাধারণ চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করছি, তিনি যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করেন।”
তিনি বলেন, আগামী ২৩ আগস্ট ঢাকায় আরেকটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে আমরা অংশ নেব। এখন চা শ্রমিকরা নিজ নিজ চা-বাগানে কর্মবিরতি পালন করবেন। যদি আমাদের দাবি আদায়ের স্বার্থে রাস্তায় নামতে হয়, আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি তা জানিয়ে দেব।
এদিকে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির ৬ষ্ঠ দিনে দেশের বিভিন্ন চা-বাগানে শ্রমিকদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চা-বাগানের বাইরে সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের মাধবপুরের জগদীশপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চা শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শ্রমিক নেতারা বলেন, ঢাকায় শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে বৈঠকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে তামাশা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চা শ্রমিকদের ১২০ টাকা মজুরিতে জীবন-জীবিকা চালানো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য চা শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরি আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।
তারা বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ৩০০ টাকা করা না হলে কোনো অবস্থাতেই তারা কাজে ফিরবেন না। প্রয়োজনে তারা বাগানের বাইরে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাবেন।
লস্করপুর ভ্যালির সভাপতি রবীন্দ্র নেতৃত্বে এ সময় বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতা স্বরজিত পাশী, খোকন পানতাঁতী, প্রদীপ কৈরি, লালন পাহান, খায়রুন নাহার, বাবুল হোসেন খান, চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন চৌধুরী, আইয়ূব খান প্রমুখ।
এর আগে গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। পরবর্তীতে গত ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অর্নিদিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করার ডাক দেয় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।