৪০০ বছরের রহস্যে ঘেরা অচিন বৃক্ষ

মো. নুর আলম, নারায়ণগঞ্জ প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২, ০৯:১০ এএম

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা। এখানেই জাঙ্গীর টেঙ্গর এলাকায় ৪০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি গাছ। তবে কেউ জানে না এ গাছের নাম। গাছটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য, সৃষ্টি হয়েছে উপকথার। স্থানীয়রা গাছটির নাম দিয়েছেন ‘অচিন বৃক্ষ’।

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাছটির বয়স হবে প্রায় ৪০০ বছর। ব্রিটিশ আমলে এখানে গভীর জঙ্গল ছিল। সেখানে ভয়ে মানুষ উঁকিও দিত না। পাকিস্তান আমলে ৬২ সালের দিকে এক সাধু আচমকা গাছটির নিচে আশ্রয় নেন। তার কানে ছিল দুল। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। পায়ে ঘুঙুর। পরতেন পাটের চট। বাক্‌প্রতিবন্ধী এ সাধু ক্ষিধে পেলে অচিন গাছের পাতা চিবিয়ে খেতেন। আর বাঁশের তৈরি হুক্কা দিয়ে হুক্কা খেতেন। এরপর ধীরে ধীরে মানুষের যাতায়াত শুরু হয় এই স্থানে।

একসময় মানুষ সাধুর কাছে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য পানিপড়া নিত। অনেকে নানা কিছু মানত করতেন। তার সঙ্গে সব সময় বালতি থাকত। তাই ওই সময় তাকে সবাই বালতি সাধু বলে চিনত।

স্থানীয়রা আরও জানান, অচিন গাছের নিচে বিশাল আকৃতির সাপের বসবাস ছিল। একদিন গর্ত থেকে সাপ বের হয়ে মানত করা মুরগি ধরে গর্তে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় সাধু পাগলা সাপের লেজে ধরে টানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একবার মহররম মাসে আগুনের কুণ্ডলী থেকে তার পরনের চটে আগুন ধরে শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। প্রায় আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মহররম মাসের ১৪ তারিখ তিনি মারা যান।

জাঙ্গীর সুন্নি মাদ্রাসার মাওলানা ফাইজুদ্দিন বলেন, “বালতি সাধু ইরাকের বাগদাদ শহরের এক পীরের শিষ্য ছিলেন। তাই তাকে নুরাবাগদাদী বলে ডাকত অনেকে।”

স্থানীয় হুমায়ুন মাস্টার জানান, গাছটি অনেক পুরোনো। নুরাবাগদাদের আগমন না হলে অচিন গাছ ও অচিন দ্বীপের সৃষ্টি হতো না। উদ্ভিদ বিভাগের লোকজন ও গাছটির পরিচয় চিহ্নিত করতে পারেনি। ফলে এলাকাবাসী গাছটিকে অচিন গাছ বলেই চেনে। আর জায়গাটিকে চেনে অচিনতলা হিসেবে। এটা ওয়াকফ সম্পত্তি।

হুমায়ুন মাস্টার আরও জানান, গাছটি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। মানত করেন। আগে কয়েকবার নুরাবাগদাদীর নামে মেলা বসত। ঝামেলার কারণে এখন আর এটা হয় না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অচিন দ্বীপের ওয়াকফ সম্পত্তি দখলে নিতে একটি চক্র মরিয়া। দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি নানাভাবে পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। পাশাপাশি অযত্নে অবহেলায় রয়েছে অচিন গাছ ও নুরাবাগদাদীর মাজারটি।

অচিন বৃক্ষটির ঝরে পড়া পাতাও কেউ কুড়িয়ে নেয় না। বছরেও দু-তিনবার পাতা ঝরে। আবার ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন পাতায় পল্লবিত হয়ে ওঠে শাখা-প্রশাখা। কথিত আছে, গাছের ডাল কিংবা পাতা অকারণে ছিঁড়লে নাকি পেটে ব্যথা হয়। তবে মনোবাসনা কিংবা রোগবালাইয়ের জন্য কেউ যদি পাতা ছিঁড়ে চিবিয়ে খান সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। বৃক্ষটির পাতা দেখতে অনেকটা বটপাতার মতো। তবে ছোট আকারের ফল হয়। দেখতে কিশমিশের মতো।

আফতাব উদ্দিন নামের স্থানীয় একজন বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক বৈজ্ঞানিক সরেজমিনে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও এই বিরল প্রজাতির গাছের নাম পরিচয় উদ্ধার করতে পারেননি। মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর নূরুজ্জামান ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর মো. জাহাঙ্গীর আলম এটিকে ডোমার গোত্রের গাছ বলে অভিহিত করেন।”

অচিন গাছের গোড়ায় পশ্চিমে মাইজউদ্দিন পাগলার সংরক্ষিত আসন। আগে রয়েছে খানকা শরিফ। আর দক্ষিণে রয়েছ নূরা পাগলার কবর। বর্তমানে খাদেম হিসেবে রয়েছেন রুহুল আমীন। তিনি প্রতি সোমবার সন্ধ্যায় খানকাতে বসেন। ভক্তদের সঙ্গে কথা বলেন। সমস্যার সমাধান দেন।

উপজেলা বন কর্মকর্তা সঞ্জয় হাওলাদার বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে গাছটির পরিচয় জানার চেষ্টা করব।”