নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (১৮ জুলাই) বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলম এ আদেশ দেন। এরআগে পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর এবং দুটি মন্দিরে হামলার ঘটনায় রোববার (১৭ জুলাই) রাতে লোহাগড়া থানার এসআই মাকরুফ রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২৫০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার পরই গ্রেপ্তার অভিযানে নামে পুলিশ।
মামলার পরে ওই রাতেই দুইজন এবং সোমবার (১৮ জুলাই) সকালে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার দুজন দিঘলিয়া গ্রামের রাসেল মৃধা (৪৫), চরমাউলী গ্রামের কবীর কাজী (৪০), তালবাড়িয়া গ্রামের মো. সাঈদ শেখ (৫৫),বাটিকাবাড়ি গ্রামের রেজাউল শেখ (৪০) ও বয়রা গ্রামের মাসুম বিল্লাহ (৩০)।
পোস্ট প্রদানকারী আকাশ সাহাকে শনিবার (১৬ জুলাই) রাতে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে দিঘলিয়া গ্রামের সালাহ উদ্দীন কচি বাদী হয়ে আকাশের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করেছিলেন।
পুলিশের ৫ দিনের আবেদেনের প্রেক্ষিতে আদালত আকাশের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ফেসবুকে মহানবীকে কটূক্তি ও বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১৫ জুলাই) লোহাগড়ার দিঘলিয়ায় বাড়িঘর, দোকান এবং দুটি মন্দিরে হামলার ঘটনার ঘটে।
রাতে হরিপদ মিষ্টান্নভাণ্ডরের প্রায় সাড়ে তিন মণ নানা ধরনের মিষ্টি নষ্ট করা হয়ে। দুটি শোকেস ভেঙে তছনছ করা হয়। তার ক্যাশ ভেঙে নিয়ে গেছে ৩০ হাজার টাকা। দোকান গোছগাছ করলেও কবে ফের চালু করতে পারবেন তা বলতে পারেননি মালিক গোবিন্দ কুণ্ড।
তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, “আমরা তো হিন্দু মানুষ। নরম মানুষ। আবার কোন সময় কী ঘটবে, তা বলা যায়?”
সাহাপাড়া মন্দিরে হামলার পরপরই সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাহাপাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুরও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। সে সময় বাড়িতে গৌর চন্দ্র সাহার স্ত্রী ও পুত্র, তার বড় ভাই শিবসাহা তার দুই ছেলে-মেয়ে ছিলেন। আক্রমণের সময় তারা আরেক ঘরে তালা মেরে লুকিয়ে ছিলেন। দুর্বৃত্তরা এসে তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আলমারি ভেঙে টাকা ও সোনা লুট করে নিয়ে যায়।
গৌর চন্দ্রের স্ত্রী মালা রানী বলেন, “আমার বিয়ের গয়না নিয়ে গেছে। ছেলের ঢাকায় যাওয়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা ছিল, তা-ও নিয়ে গেছে। মাশরাফি এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে। এখনো আমার ভাশুরসহ অন্যরা বাড়ি ফেরেনি।”
দিঘলিয়া বাজারে পান বিক্রেতা গোবিন্দ সাহার বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে একদল আসে তারা তালা ভেঙে লুট করে চলে যায়। এরপর আরেক দল এসে ঘরে কিছু না পেয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।