বিয়ের আগের দিন লাশ হলেন তরুণী

সিলেট প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২২, ০৭:৫৩ পিএম

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার মেয়ে আয়শা আক্তার (১৮)। বুধবার (১৩ জুলাই) বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল তার। সে অনুযায়ী নিমন্ত্রণও দেওয়া হয়েছিল সবাইকে। কিন্তু বিয়ের আগের দিন লাশ বহনকারী খাটিয়ায় উঠতে হলো আয়শাকে।

জানা গেছে, প্রতিবেশী মৃত কদ্দুস মিয়ার ছেলে কাভার্ডভ্যান চালক সালাউদ্দিন সুমনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল আয়শার। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাতে গায়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত শনিবার দুপুরে এলাকায় গরুর ধান খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে প্রতিবেশী সিরাজ মিয়া ও তার স্বজনরা। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান আয়শা।

ছতিয়া গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে আয়শা আক্তার দ্বিতীয়। কিছুদিন আগে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন একই গ্রামের মৃত জহুর মিয়ার ছেলে রিয়াজ মিয়া। বিয়ের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন আয়শার পরিবার ও তার চাচা নওশাদ মিয়া। পরে গত ১ জুলাই প্রতিবেশী সালাউদ্দিন সুমনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল বুধবার (১৩ জুলাই)।

এদিকে রিয়াজের সাথে আয়শার বিয়ে না মেনে সুমনের সাথে বিয়ে ঠিক করায় আয়শার পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল রিয়াজের পরিবার। গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) আয়শার চাচা নওশাদ মিয়া স্থানীয় ভানুগাছ বাজার থেকে কোরবানির জন্য গরু কেনেন। শনিবার দুপুরে খুঁটিতে রশি দিয়ে বাঁধা গরুটি ছুটে গিয়ে প্রতিবেশী রিয়াজের ভাইয়ের ধান খায়। এ নিয়ে নওশাদের পরিবারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হলে এগিয়ে আসেন আয়শা। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত সিরাজ, সামাদ ও রিয়াজ ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান।

হামলাকারীরা আয়শাসহ নওশাদের পরিবারের ৫ জনকে কুপিয়ে আহত করে। হামলায় উভয়পক্ষের ৮ জন আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। আহতদের মধ্যে আয়শা আক্তারসহ ৪ নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য বলেন।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আয়শার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আয়শা।

হামলার ঘটনায় রোববার (১০ জুলাই) দুপুরে নওশাদ মিয়া বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওইদিন রাতেই মামলার দুই আসামি সামাদ ও সিরাজকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান জানান, এ ঘটনায় জড়িত দুই আসামিকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের আটকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।