সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা এখন বাঁচার জন্য খাবার আর থাকার জন্য ঘর মেরামতের চিন্তার অস্থির। এর মধ্যে দুয়ারে কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। কিন্তু বানভাসি মানুষগুলোর মনে নেই ঈদের আনন্দ, নেই প্রস্তুতি। বন্যায় সব হারানোর মানুষগুলো হন্যে হচ্ছেন ত্রাণের খোঁজে।
তেমনই একজন জয়বা খাতুন (৬০)। তাহিরপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের জামালগর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ত্রাণের জন্য বসে আছেন উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে। কথা হয় তার সঙ্গে। নিজের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নিজের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেয়েছিল। কোনো রকমে দিন পার করছি। এখন খাবার জোগাড়ে ব্যস্ত। কিন্তু সারা দিন ঘোরাঘুরি করেও খাবার জোগাড় হয় না। খুব কষ্ট দিন পার করতাছি। গরিবের কোনো ঈদ নাই। বাঁইচা থাকাটাই এখন বড় দায় হয়ে গেছে।”
একই গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা (৪০)। স্বামীহারা এই নারী বলেন, “বড় কষ্টে আছি। ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে শেষ করে দিছে। ঘরে কোনো রকমে আছি। খাবার তো আর কেউ দেয় না। যা পাইছি, তা কোনো রকমে চলতেছি।”
উপজেলার সদর ইউনিয়নের সূর্যেরগাঁও গ্রামের মোজাহিদ মিয়া বলেন, “পানি কমায় চৌদ্দ দিন পর বাড়ি ফিরে দেখি ঘরসহ ঘরের জিনিসপত্র শেষ। সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। হাতে টাকাও নেই। এখন কাজও পাই না। কীভাবে যে তিন বেলা ডালভাত খামু, ভেবে পাই না। এখন ঘর করমু না ঈদে সবাইরে নতুন কাপড় কিনে দিমু। কীভাবে যে কী করমু, বুঝতাছি না। ঈদের আনন্দ বানের পানিতে শেষ। সব ভেসে গেছে।”
কথা হয় তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাকমুদা বিবির সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “ভাই কী কমু কষ্টের কথা। বন্যার সময় তিন দিন ভাত না খেয়ে কোনো রকমে নিজের ভাঙাচুরা বাড়িতে ছিলাম। ঘর থেকে বের হবার কোনো সুযোগ পাইনি। এখন ধারকর্য করে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতাছি। ঈদে সন্তানদের নতুন কাপড় কিনে দিতে পারতাম না, এই কষ্ট কারে কমু।”