সুনামগঞ্জে বন্যার পানি থেকে জীবন বাঁচাতে ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন লাখো মানুষ। তবে বন্যার পানিতে হারিয়েছেন গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, মহিষসহ বিভিন্ন গৃহপালিত পশু-পাখি। এতগুলো পশু মৃত্যু হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জে সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নিমিষেই ডুবে যায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরসহ ১২টি উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েন ১২ লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন সড়ক ডুবে ও ভেঙে সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে ডুবে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি গৃহপালিত পশু-পাখির মৃত্যু হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব পশুর মালিকেরা।
জেলা প্রাণি সম্পদ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় ৭২ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৫টি গবাদিপশু রয়েছে। এরমধ্যে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি গবাদিপশু বন্যার পানিতে মারা গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ২১২টি গবাদিপশু মারা গেছে। ছাতক উপজেলায় ১৫ হাজার ৭৮২টি, দোয়ারাবাজারে ২১ হাজার ৮৫৫টি, জগন্নাথপুরে ১২ হাজার ৮৫৩টি, জামালগঞ্জে ২৯ হাজার ৩৭৯টি, বিশ্বম্ভপুরে ৮ হাজার ৮৯০টি, দিরাইয়ে ২৯ হাজার ১৪০টি, শাল্লায় ৬ হাজার ৫৫৫টি, তাহিরপুরে ৮ হাজার ৮৩০টি, ধর্মপাশায় ৫ হাজার ৬৬৩টি ও শান্তিগঞ্জে এক লাখ ১৬ হাজার ৩৬৯টি গবাদিপুশ বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে।
এছাড়াও একই সঙ্গে ভেসে গেছে ৯০০ মেট্রিকটন গোখাদ্য। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০০, ছাতকে ১৫০, দোয়ারাবাজারে ৬০, জগন্নাথপুরে ১০০, জামালগঞ্জে ৬০, দিরাইয়ে ১২০, বিশ্বম্ভরপুরে ৩০, তাহিরপুরে ৬০, শাল্লায় ৩০, ধর্মপাশায় ৮০, ও শান্তিগঞ্জে ১১০ মেট্রিকটন গোখাদ্য ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
জেলা সদর ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জহির মিয়া বলেন, “বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি। কষ্ট করে দুটি গরু কিনেছিলাম। বন্যায় গরু দুটি মারা গেছে। এখন না ঘরবাড়ি, আর না গরু ছাগল। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব আমরা।”
ক্ষতিগ্রস্ত জাকির মিয়া বলেন, “ছেলে-মেয়েকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে গোয়াল ঘরে থাকা গরু নিতে এসে দেখি দুটি আছে আর তিনটি বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। অনেক খুঁজেও পাইনি। এখন আমার চলা বড় দায়। সহায়তা না পেলে বাঁচা-মরা সমান হবে।”
জেলার তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, হাওরাঞ্চলে পশু-পাখির চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। কিন্তু এবারের বন্যা পশু-পাখির ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। আমার ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সহায়তা করা এখন খুবেই প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জানান, বন্যায় এবার জেলার ১১টি উপজেলায় ৯০০ মেট্রিকটন গোখাদ্য নষ্ট হয়েছে। প্রতি মেট্রিকটন গোখাদ্য ৫২ হাজার টাকা হিসেবে ধরলে যার মূল্য দাাঁড়ায় ৪ কোটি ৫৮ হাজার টাকায়। ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ডা. আসাদুজ্জামান আরও জানান, জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি পশু-পাখির মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে গো খাদ্য চরম আকারে সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৯০০ টন গো খাদ্য ও ওষুধ চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে।