পদ্মা সেতুতে ভোগান্তি কমেছে বরিশালবাসীর

মো. শহিদুল ইসলাম, বরিশাল প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২২, ০৮:৫৫ এএম

পদ্মা সেতুর সুফল পেতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ভোগান্তি কমেছে তাদের। এ সেতুর কারণে নৌপথে কমে গেছে যাত্রী।

ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে লঞ্চ কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় যাত্রী টানতে ভাড়া কমিয়েছে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। কেবিন থেকে ডেক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাড়া কমেছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। ভাড়া কমানোতে খুশি যাত্রীরাও।

যাত্রীরা বলছেন, আন্দোলন করেও যেখানে ভাড়া কমানো যাচ্ছিল না, সেখানে সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চ মালিকরা নিজেরাই ভাড়া কমিয়েছেন।

ঘাটের লঞ্চ কাউন্টার থেকে জানা যায়, সেতু চালু হওয়ার আগে বিভিন্ন লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ১৪০০ টাকা, ডাবল ২৪০০ টাকা, ফ্যামিলি ২৫০০ টাকা, সোফা ৭০০ টাকা এবং ডেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা কমে যায়। এ অবস্থায় ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেন লঞ্চমালিকরা। বর্তমানে ননএসি সিঙ্গেল কেবিনে ১০০০ টাকা ও এসিতে ১২০০ টাকা, ডাবল ননএসি কেবিনে ২০০০ টাকা ও এসিতে ২২০০ টাকা, ফ্যামিলি কেবিন ২২০০ টাকা, সোফা ৫০০ টাকা এবং ডেকে ২৫০ টাকায় যাতায়াত করতে পারছেন যাত্রীরা।

লঞ্চের কর্মীরা বলছেন, ভিআইপি কেবিনে আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কম নেওয়া হয়। আর ঘাট ছাড়ার আগ মুহূর্তে লঞ্চে উঠলে ভাড়া আরও কম রাখা হয়।

বরিশাল নদীবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন ২৬ এপ্রিল বরিশাল নৌবন্দর থেকে পাঁচটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এর মধ্যে সুন্দরবন কোম্পানির লঞ্চ ছাড়া বাকি চারটি লঞ্চের বেশির ভাগ কেবিনই খালি ছিল। একইভাবে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে আসা লঞ্চেও যাত্রী কম ছিল। এ অবস্থায় সোমবার (২৭ জুন) থেকে যাত্রী ভাড়া কমিয়ে দেন লঞ্চ মালিক সমিতি।

নগরীর মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা রিয়াদ আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে এ অঞ্চলের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিলেন লঞ্চ ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে তা আদায় করা হতো। তা ছাড়া প্রতিবছর দুই ঈদে বাড়তি ভাড়া আদায় হলেও তারা জানান দিত সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করছে। এছাড়া লঞ্চের একটি কেবিন পেতে বিভিন্ন মহলে ধর্না দিতে হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এসব সমস্যা থেকে নিস্তার মিলেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

রিয়াদ আহমেদ আরও বলেন, “লঞ্চের খাবার দোকানগুলো যাত্রীদের থেকে গলাকাটা দাম রাখা হতো। এ অবস্থারও পরিবর্তন দরকার। লঞ্চ ব্যবসা চালাতে হলে যাত্রীদের শতভাগ সেবা দিতে হবে। আগে যেখানে ৭ ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকা আসতাম, সেখানে এখন মধ্যে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছা যাবে।”

বরিশাল নদীবন্দরের কলার (যাত্রী ডেকে নির্ধারিত লঞ্চে তোলেন) মানিক জানান, পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের পর লঞ্চে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে যাত্রী ভাড়া কমিয়ে আনা হয়। তারপরও রাত ৮টা থেকে ঘাট ছাড়ার আগমুহূর্তে সব কেবিনের ভাড়া কমিয়ে দেওয়া হয়। কমানো হয় ডেকের ভাড়াও। এ ক্ষেত্রে ডেকের যাত্রীরা ১০০ টাকাতেই ঢাকায় যেতে পারছেন।

সুন্দরবন লঞ্চের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, “স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে। এখন পদ্মা সেতুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেক বেশি। এ কারণে যাত্রী কিছুটা কমেছে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও যাত্রীদের কথা চিন্তা করে লঞ্চ মালিকরা ভাড়া অনেক কমিয়ে দিয়েছেন।”

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, “ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতা থাকলে যাত্রীরা সুফল ভোগ করবেন। পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চযাত্রায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কারণ লঞ্চে চলাচল নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী। আর লঞ্চে যাত্রীদের জন্য থাকা-খাওয়াসহ বিনোদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ লঞ্চে রয়েছে ওয়াইফাই সুবিধা। সব মিলিয়ে আমাদের যাত্রী কমবে না।”