বিভিন্ন কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দিন দিন তা একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও যা জঘন্যতম মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই এ প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না।
সাংসারিক কলহ-বিবাদ, অতিরিক্ত রাগ, ক্ষোভ, মান-অভিমানসহ নানা ঘটনায় বাড়ছে আত্মহত্যা। বিভিন্ন জায়গায় ঋণগ্রস্ততা এবং ঋণের দায়ে ভারাক্রান্তরাও বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ।
নাটোরের সিংড়ায় গত এক সপ্তাহে নববধূ, স্কুলছাত্র, তালাকপ্রাপ্ত নারী ও প্রতিবন্ধীসহ বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, তদন্তও চলছে।
জানা যায়, মতামত উপেক্ষা করে বিয়ে দেওয়ায় গত ২৪ মে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে আলেয়া খাতুন ওরফে আলো নামের এক নববধূ। বিয়ের মাত্র ২০ দিন পরে এ ঘটনা ঘটে।
গত ২৯ মে দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে আত্মহত্যা করে বিথী বেগম (২২) নামে এক গৃহবধূ। সে ওই গ্রামের মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী।
গত ৩১ মে উপজেলার শেরকোল আগপাড়া গ্রামে গলায় ফাঁস দিয়ে একই গ্রামের স্কুলছাত্র ও প্রতিবন্ধী নারীর পৃথক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। একই দিনে মোবাইল কেড়ে নেওয়ায় মায়ের ওপর অভিমান করে এসএসসি পরীক্ষার্থী মেহেদি হাসান রাব্বি (১৬) আত্মহত্যা করে। সে সিংড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের এসএসসি পরিক্ষার্থী ও আগপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আয়নাল হকের ছেলে।
এ ছাড়া গত ৩১ মে নিজ শয়নকক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় একই গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তালাকপ্রাপ্ত কোহিনুর বেগমকে (২৩)। সে ওই গ্রামের মৃত শামসুল হকের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, কোহিনুর বেগম একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তালাকপ্রাপ্ত নারী। ৩১ মে সকালে নিজ শয়নকক্ষে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, “সিংড়া উপজেলায় হঠাৎ আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন পার করছে সবাই। আত্মহনন ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির বিকল্প নেই।”
এ প্রসঙ্গে শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা সাদরুল উলা বলেন, “আত্মহত্যা ইসলামি শরিয়তে জঘন্যতম একটি পাপ, যার একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম। আত্মহত্যা ইহকাল পরকাল উভয়ই ধ্বংস করে দেয়।”
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) জামিল আকতার বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়। বিষণ্ণতা এবং জীবনের নানামুখী চাপে নিষ্পেষিত মানুষরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে পরিবারের সব সদস্যদের এই মানসিকভাবে নজর দেওয়া উচিত।”