একের পর এক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে নিজেই অন্ধ হওয়ার পথে বরিশালের সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা যে কক্ষে থাকছেন সেখানেই ক্লাস কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তার ওপরে পর্যাপ্ত শিক্ষক, কর্মচারী নেই। স্যাঁতসেঁতে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান।
বিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতল বিশিষ্ট বিদ্যালয়টির দেওয়ালের রং উঠে গেছে। জানালার অবস্থা নাজুক। নিচ তলায় একটি কক্ষ প্রধান শিক্ষকের। আরেকটি কক্ষে অফিসের কার্যক্রম চলে। বাকি কক্ষগুলো ছাত্রদের। এর মধ্যে একটি খাবার রুম, বাকিগুলোতে বাস করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে প্রায় ৩০ জন ছাত্র। টয়লেটের জন্য আধা কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। টয়লেট থাকলেও তা প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। অনেক ভবনের মেঝেতে কাঁচা, স্যাঁতসেঁতে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের পার্শ্ববর্তী একটি ভবন ছিল। সেখানে বালক শিক্ষার্থীরা বসবাস করতেন। ভবনটি পুরাতন হওয়ায় ২০১১ সালে ভেঙে ফেলা হয়। এ কারণে স্কুলের ভেতর ছাত্রদের থাকার জন্য নির্ধারিত করে দেন কর্তৃপক্ষ। নতুন ভবন না হওয়ায় সরকারি স্কুলের ২/৩টি কক্ষ ছাত্রদের থাকার স্থান করে দেওয়া হয়। সরকারি অন্ধ বিদ্যালয়ে মোট ৩৫ জন জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ২৯টি পদের বিপরীতে ১৪ জন কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য। সহকারী শিক্ষক পদ ২টি শূন্য রয়েছে। ৫ জন শিক্ষকের স্থানে ৪ জন কর্মরত। অফিস সহায়ক ৫টি পদের মধ্যে একজন দায়িত্বে আছেন। তবে দায়িত্বরত অফিস সহায়ক একাই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১টি পদ, বাবুর্চি ২টি পদের মধ্যে ১টি পদ খালি রয়েছে। এত কিছুর পরেও বিদ্যালয়টি প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলে সুনাম কুড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এমনিতেই চোখে দেখতে পারি না। তার মধ্যে একটি রুমে আলাদা বেডে থাকতে হচ্ছে। যে সিটে ঘুমাই, সেখানেই ব্যবহারের জিনিসপত্র রাখতে হয়। দুইপাশে বেড থাকায় হাঁটতে গিয়ে ব্যথা পেতে হয়। একটি পড়ার টেবিলে দুইজনকে পড়তে হয়। বাথরুম ও গোসলের জন্য আধা কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে হয়।
শিক্ষক খোকন চন্দ্র বর্মণ, মেহরাব হোসাইন, আবিদ বলেন, একটি অফিস কক্ষে বসে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। কষ্ট হলেও মেনে নিয়ে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তবে এ কষ্ট বেশি দিন মনে হয় থাকবে না। স্কুল উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছেন।
বরিশাল সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অতিরিক্ত) জাহান কবির বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের হাতের ছোঁয়া প্রায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেগেছে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ছোঁয়া যেন আমাদের প্রতিষ্ঠানে লাগে। শিক্ষকগণ অতিকষ্টে অধ্যয়নরত ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে পাঠদান করে যাচ্ছেন। এ স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ থেকে প্রতিবছর ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফলাফল করে আসছে।”
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আল-মামুন তালুকদার বলেন, “সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভেতরে ছাত্রাবাস রাখা হবে না। তাদের থাকার জন্য আলাদা ডরমেটরি ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া স্কুল ভবন একটু পুরাতন হয়ে গেছে। সেটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”