বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরা। সেখানে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ সুন্দরবন। বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের আয়ের স্থান। সেখানে বাবা আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুর ১৪ বছর পর একইভাবে মধু আহরণ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারালেন তার একমাত্র ছেলে কাওছার গাইন (২৮)।
১৪ বছর আগে বাবা আব্দুর রাজ্জাক মধু সংগ্রহের জন্য বনে গেলে বাঘের আক্রমনে নিহত হয়। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার লাশ পাওয়া যাইনি। একই ঘটনা ঘটল ছেলের সঙ্গে।
শনিবার (২১ মে) সকালে সুন্দরবনের খেজুরদানা (নোটাবেকী) এলাকায় মধু সংগ্রহের সময় বাঘের শিকারে পরিণত হন তিনি।
রোববার (২২ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত বনকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তার সহযোগী মৌয়ালরা ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও কাওছারের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।
বাঘের আক্রমণের শিকার কাওছার গাইন শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা ইউনিয়নের খলিশাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
নিহত কাওছার গাইনের সহযোগী আলম হোসেন ও আব্দুল মাজেদ জানান, তারা গত ২২ মার্চ সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি স্টেশন থেকে পাশ (অনুমতি) নিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যান। কয়েক দফা এলাকায় ফিরে এ বছরের শেষ চালানের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার থেকে তারা নোটাবেকী খেজুরদানা অংশে মধু কাটার কাজ শুরু করে।
তারা আরও জানান, শনিবার সকালে অপর ছয় সহযোগীর সঙ্গে মৌচাক খোঁজার সময় বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে পাশের ঝোঁপ থেকে একটি বাঘ লাফিয়ে কাওছারের ওপর পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় এক মুহূর্তের জন্য সহযোগীরা আতঙ্কিত হয়ে দূরে সরে গেলেও মুহূর্তের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই বাঘটি কাওছারকে নিয়ে বনের আরও গভীরে চলে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমাম হাসান জানান, কাওছার গাইন, একই গ্রামের মোশারফ, আলম, সাইফুল মোড়ল ও আব্দুল মাজেদের সঙ্গে বনে যায়। বাঘের আক্রমণে তার মৃত্যুর খবরে কাওছারের পরিবারে শোকের মাতম শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১৪ বছর আগে একইভাবে সুন্দরবনে মধু কাটতে যেয়ে কাওছারের বাবা আব্দুর রাজ্জাকও বাঘের কবলে পড়ে নিহত হয়েছিলেন। কাওছার এলাকার অত্যন্ত বিনয়ী এবং ভাল মানুষ ছিলেন। এখন তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতা না মিললে পরিবারটি চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়বে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, শনিবার রাতে তারা কাওছারের বাঘে ধরার বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রোববার সকাল থেকে তারাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন।
তিনি আরও জানান, কাওছার ছিলেন তার বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বন থেকে ফিরে সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা দিলেও এখন পর্যন্ত তার মরদেহ উদ্ধার করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, কাওছার নামের এক মৌয়াল সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। রোববার সকালে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরই নিহত মৌয়ালের সহযোগীদের নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেয় বনবিভাগের একটি টিম। তবে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার মরদেহ পাওয়া যায়নি।