উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুড়িগ্রামে দুই সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও কালজানীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে জেলার ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়লেও অসময়ে এখনি বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পানি বাড়ায় নদ-নদী তীরবর্তী নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, বাড়িঘরের চারপাশে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বিশেষ করে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, “ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের নিচু এলাকা ইতোমধ্যে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। অনেকের বাড়িঘরের চারপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি এভাবে অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।”
প্রতিদিনই পানি বাড়ছে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, “ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের তীরবর্তী অনেক ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বাসিন্দারা বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ার চেয়ে নিজেদের আবাদ করা ধান রক্ষায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।”
যাত্রাপুর হাট এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল বলেন, “কয়েকদিন ধরে দ্রুত পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে যাত্রাপুর হাটের নিচু এলাকায় ঢুকেছে।”
নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা মামুনর রশীদ জানান, তাদের এলাকাতেও নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়ন ঘুরে এসে তিনি বলেন, “সেখানে নদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধানক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।”
কুটিবামনডাঙা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তীর সংরক্ষণ কাজের সাইটে ঠিকাদারের লোকজন পানি নিষ্কাশনের পাইপ বন্ধ করায় সেখানে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, আগামী কয়েকদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ধরলা ও তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে এখনও জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত এবং সীমান্তবর্তী ভারতীয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে এখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পূর্বাভাস নেই। আগামী কয়েকদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।”
তিস্তা অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও তা মেরামতে কাজ চলছে জানিয়ে পাউবোর এ কর্মকর্তা আরও বলেন, “জেলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নদী ভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে। প্রচুর পরিমাণ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় প্রস্ততি রয়েছে।”
সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “বন্যা মৌসুম এসে গেছে। আমরা জেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভা করেছি। সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”