শাবিতে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি দাবি

সিলেট প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২২, ০৭:২০ পিএম

বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শনিবার (৯ এপ্রিল) বিকেল আড়াইটায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের সড়কে তিনটি সংগঠন এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

সংগঠন তিনটি হলো সাহিত্য বিষয়ক সংগঠন ‘সাস্ট সাহিত্য সংসদ’, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠন ‘ক্যামসাস্ট’ ও বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন ‘সায়েন্স এরেনা’।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায়, অর্থনীতি বিভাগের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপু এবং সাস্ট সাহিত্য সংসদের কোষাধ্যক্ষ ও জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনা।

মানববন্ধনে অধ্যাপক ড. হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, “আমরা দেখছি একজন শিক্ষককে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষক নয়, আমরা দেখছি দেশে এক ধরণের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সরকার দাবি করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সরকার, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার; কিন্তু সরকারি মহলের অনেকের বক্তব্য সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা চাই বাংলাদেশের সকল মানুষ সম-অধিকারের ভিত্তিতে বসবাস করবে। আমরা চাই এখানে সকলেই তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারবে।”

হিমাদ্রী শেখর রায় আরও বলেন, “আমরা অডিওতে যা শুনতে পেয়েছি, বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা ঘটানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষকের মুক্তি দাবি করছি।”

মানববন্ধনে শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার লুবনা বলেন, “একজন শিক্ষক ক্লাস করাচ্ছেন, সেই ক্লাসে তার লেকচার রেকর্ড করে, তার ওপর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন শিক্ষককে কথা বলার সময় ভাবতে হবে যে তিনি কী কথা বলবেন! কিন্তু আমাদের শিক্ষা তো এরকম হওয়া উচিত ছিল না। আমাদের একাডেমিক ফ্রিডম বলে একটা কথা আছে। যেখানে শিক্ষক হবেন মুক্ত। যিনি আমাদের মনে প্রশ্ন করার উদ্দীপনা জাগাবেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের কোনো শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকের ওপর এমন জোর-জবরদস্তিমূলক হয়রানি মানি না। শুধু শিক্ষাঙ্গনে না, দেশের যে কোনো জায়গায় যে কোনো মানুষের মুক্তচিন্তার কিংবা মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার আছে।”

শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপু তার বক্তব্যে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং মুক্তির দাবি জানান।

২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে এবং শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। সেই কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী এলাকায় হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় ওই শিক্ষককে পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।

ঘটনার দুইদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। গত ২৩ মার্চ তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

ইতোমধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মুক্তি চেয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এছাড়া তার মুক্তি চেয়েছে দেশের সুশীল সমাজ, সংস্কৃতিকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবী মানুষ।