বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত টুঙ্গিপাড়া

বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১, ০৮:২৮ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম টুঙ্গিপাড়ায়। এখানে কেটেছে জাতির পিতার শৈশব ও কৈশোর। শিশুকাল থেকেই শেখ মুজিব ছিলেন পরোপকারী এবং অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় যেমন সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়াতেন, তেমনি কারও প্রতি অন্যায় আচরণ দেখলেও তিনি প্রতিবাদ করতেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অধিকার সচেতন। অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ন্যায়কাজ করা ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেকোনো সমস্যা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতেন তিনি। 

বঙ্গবন্ধু মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও নিপীড়ন মোকাবেলা করে গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক জীবনধারায় শামিল করেছেন। পাড়াপড়শি দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে সারা জীবন মোকাবেলা করতে হয়েছে। বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি যেকোনো শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ ও মাথানত করেননি। টুঙ্গিপাড়ার সেই কিশোর শেখ মুজিবের নাম শুধু টুঙ্গিপাড়ায়ই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাঁর নাম দেশ গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। 

টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্যালক শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনচেতা। এলাকার সমবয়সীদের নিয়ে বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গা, এখন যেটি বড় তালাব নামে পরিচিত, সেখানে ও জিটি স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতেন। বাড়ির পাশে হিজলগাছের নিচে বসে গল্প করতেন। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঘিয়ার খালে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন। বাড়িতে এলে এই হিজলতলায় বসে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন। খালের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতেন। কোথাও গেলে হিজলগাছতলা থেকে নৌকায় উঠতেন। আবার সেখানে এসে নামতেন। নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে হিজলতলাসহ টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন স্থানে।
 
টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশের ছেলে শেখ বোরহান উদ্দিন জানান, প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ শেখ কুদরতউল্লাহ আধুনিক স্থাপত্যের আদলে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে কারুকাজখচিত একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। সেটা শেখ পরিবারের বৈঠকখানা। শেখ কুদরতউল্লাহ তাঁর জমিদারির কাজ করতেন সেখানে। দালানটি ছিল মোগল আমলের শেষ দিকের পুরোনো কারুকাজখচিত ও শিল্পকর্মখচিত। শেখ একরামউল্লাহ ছিলেন কুদরতউল্লাহর ভাই। একরামউল্লাহর বংশপরম্পরায় আসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিও এই ঘরে খেলাধুলা করতেন। সমবয়সীদের নিয়ে গল্পগুজব করতেন। অনেক সময় ঘুমিয়েও থাকতেন। এখন সেই বৈঠকখানাটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাল্যবন্ধু সৈয়দ নূরুল হুদা মানিক মিয়ার ছেলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির পাশেই বয়ে যাওয়া বাঘিয়ার ছোট খাল এবং ঘাটের পাশে হিজলগাছ। সেখানে রয়েছে অনেক স্মৃতি। খালের ঘাটে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন। 

সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, “শুধু নাই বঙ্গবন্ধু, টুঙ্গিপাড়াসহ স্বাধীন বাংলাদেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর নানা কর্মময় জীবনের স্মৃতি, যা দেখে জাতির পিতার জীবনযাত্রা অনুভব করেন এলাকার বিভিন্ন বয়সের মানুষ।”

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবুল বাশার খায়ের বলেন, বঙ্গবন্ধু বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে আসতেন জিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। লেখাপড়া শেষ করে সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতেন। দেহের গড়ন লম্বা হওয়ায় খেলার ভেতর হেড বেশি দিতেন। 

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘একবার এলাকায় ভীষণ অভাব। বাড়ির ধানের গোলা থেকে মা-বাবাকে না জানিয়ে এলাকার দরিদ্রদের মধ্যে ধান বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলেন পাটগাতী গ্রামের সৈয়দ নুরুল হক মানিক মিয়া। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই ক্লাসে পড়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে মানিক মিয়ার কথা লিখেছেন, ‘মানিক আমার বাল্য বন্ধু।’

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটেছে গ্রামের আর দশজন শিশু-কিশোরের মতো। দল বেঁধে স্কুল, নদীতে সাঁতার, খেলার মাঠে ছোটাছুটি, সবই করেছেন জাতির পিতা। কিন্তু নেতৃত্বের গুণাবলি ও মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ আর ভালোবাসা ছিল অধিকতর। এই কারণে টুঙ্গিপাড়ার সেই ছোট খোকা হয়ে ওঠেন জাতির পিতা ও বাঙালির মহানায়ক।