লিবিয়ায় নিখোঁজ সিলেটের ২৪ যুবক

সিলেট প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২২, ১০:৫০ এএম

সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন ২৪ জন যুবক। তাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে গিয়ে নতুন জীবন গড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে এই প্রাণোচ্ছল যুবকদের।

নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ৮-৯ মাস আগে বিভিন্ন সময়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান ২৪ জন যুবক। কিন্তু চার মাস ধরে তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার।

বিয়ানীবাজার ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে লিবিয়ায় যাওয়া এই ২৪ যুবকের সন্ধান ও আদম পাচারকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন সাং পূর্ব লাউজারীর আমিরুল ইসলামের ছেলে তানহারুল ইসলাম (২৩), আতিকুর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০), সাং খশিরবন্দের (হাতিটিলা) হাবীবুর রহমানের ছেলে হোসেন আহমদ (৩৫), সাং খশির কোনাপাড়ার বিরাজ উদ্দিনের ছেলে রাজু আহমদ (২৬), সাং খশিরবন্দের (হাতিটিলা) আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে কামরুজ্জামান রাহাত (২২), সাং ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁওয়ের সামছুল হকের ছেলে এনামুল হক (১৯), সাং পূর্ব লাউজারীর শের মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ (৩২), লিয়াকত আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল জুনেদ (২৬), আবুল হোসেনের ছেলে আরিফ আহমদ দুলাল (২৪), সাং ঘুঙ্গাদিয়া নয়াগাঁওয়ের বারহাম আলীর ছেলে আব্দুল করিম (২৫), সাং খশিরবন্দ হাতিটিলার আবুল হোসেনের ছেলে তোফায়েল আহমদ অজিত (২৪), মো. মিন্নত আলীর ছেলে মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ইমন (২২), সাং পূর্ব লাউজারীর বিলাল উদ্দিনের ছেলে  মোহাম্মদ আলী (২৭), সাং জলঢুপের আরফত আলীর ছেলেন, কয়ছর আহমদ (২৬), ইদ্রিছ আলীর ছেলে জাকারিয়া আহমদ (২১), মাওলানা আছার উদ্দিনের ছেলে জুনেদ আহমদ (২৩), সুরুজ আলীর ছেলে হোসাইন আহমদ (১৯), মিনাজ উদ্দিনের ছেলে জুবের আহমদ (২৩), বাহার উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হক (২২)। বিয়ানীবাজারের বাবুল হোসেনের ছেলে সাহেল আহমদ (২৪),  মো. নূর উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন (২৪), ওয়াইছ আলীর ছেলে আব্দুল হাছিব (২৬), মইন উদ্দিনের  বকুল আহমদ (২৩), আব্দুল কাদিরের ছেলে আবুল কাশেম আজহার (২৫), আব্দুল মতিন চৌধুরীর ছেলে আব্দুর রহিম চৌধুরী (২৩)।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অনেক চেষ্টা করেও নিখোঁজদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এর মধ্যে সম্প্রতি আমিনুর রহমান (২৪) নামের এক যুবক লিবিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার লাশ এখনো দেশে ফেরত আসেনি।

লিখিত বক্তব্যে নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের পক্ষে বিরাজ উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, নিখোঁজরা কোনো আদম পাচারকারী চক্রের কাছে জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করছেন।

নিখোঁজ যুবকদের সন্ধানের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আতিকুর রহমান বলেন, “আদম পাচারকারী চক্র তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০-১২ লাখ টাকা করে আদায় করে। বর্তমানে আদম পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ওই যুবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লিবিয়ায় পাঠাতে সহায়তা করেন। এরা সবাই আদম পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সহযোগী।”

পাচারকারী চক্রের প্রধান হলেন ফরহাদ আহমদ (৪০)। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জাবেদ আহমদ, সায়রা বেগম ও হাদিয়া বেগম। এরা সবাই আদম পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সহযোগী।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদম পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান নিখোঁজদের স্বজনরা।

এদিকে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, “নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ানীবাজার থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”