নির্বাচন ও রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৩৩ 

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২১, ০৯:৩১ পিএম

চলতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালটে সিলমারা, ককটেল বিস্ফোরণ, দফায় দফায় সংঘর্ষ, টেঁটাযুদ্ধ, গুলি ও মারামারির মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।

জুন থেকে ইউপি নির্বাচন শুরু হয়। ধাপে ধাপে তা সম্পন্ন হচ্ছে। প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত সারা দেশে ৯২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। চতুর্থ ধাপে (ডিসেম্বর) আরও ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকার বরাত দিয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত ইউপি, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাতে আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৮ জন এবং নিহত হয়েছেন ৯৭ জন। নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪১ জন, বিএনপির ২ জন, সাধারণ মানুষ ২৫ জন, পুলিশের গুলিতে ১৭ জন এবং ১ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। বেশিরভাগ সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হয়েছে।

নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তা তুলে ধরা হলোঃ

প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তির নাম মৌজে আলী মৃধা (৬৫)। এ ছাড়া ভোটের পরে ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে খাঞ্জাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম আবু বক্কর ফকির (৩৫)। তিনি খাঞ্জাপুর গ্রামের আমজু ফকিরের ছেলে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ইউপি নির্বাচনের দুই মেম্বার প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র দখল করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মনির নামের এক যুবক নিহত হন। 

দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলি ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

নিহতরা হলো নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল হক সরকারের সমর্থক বটতলীকান্দী গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৩৭), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (টেলিফোন মার্কা) রাতুল হাসান জাকিরের সমর্থক বালুয়াকান্দী গ্রামের হেকিম মিয়ার ছেলে সালাহ উদ্দিন (৩০) ও সোবহানপুর গ্রামের হক মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর (২৭)।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডের এমআরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী সহিংসতায় মোহাম্মদ সফি (৫০) নামে এক ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো ২ জন আহত হয়েছে। নিহত সফি স্থানীয় আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মেম্বার প্রার্থী শেখ কামাল আহত হয়েছে ও তার কর্মী আকতারুর জামান পুতু ( ৩০) নিহত হয়েছেন।

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- মানিকারচর ইউনিয়নের ভল্লবেরকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেনর ছেলে শাওন ও ভাওরখোলা ইউনিয়নের খিরাচক গ্রামের মৃত মুজাফফর ঢালীর ছেলে সানাউল্লা ঢালী।

তৃতীয় ধাপে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গারাগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে বিজিবি নায়েক রুবেল নিহত হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বাংলাবাজারে পৃথক সহিংসতার ঘটনায় শাকিল মোল্লা (৩০) ও রিয়াজুল শেখ (৬০) নিহত হন।  আহত 

নরসিংদীতে পৃথক ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রায়পুরার চান্দেরকান্দিতে ভোট গণনা শেষে সংঘর্ষে আরিফ (২৮) নামের এক অটোরিকশাচালক নিহত হন।  উত্তরবাখরনগর ইউনিয়নে পৃথক সংঘর্ষে আহত ফরিদ মিয়া (৩২) নামের আরেকজন ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগণনার পরে কারচুপির অভিযোগ ও ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৩ জন নিহত হয়েছেন।  নিহতরা হলেন ঘিডোবপুর গ্রামের সাহাবলি আহম্মেদ (৩৫), মোজাহারুল ইসলাম (৪০) ও অবিনাশ চন্দ্রের ছেলে আদিত্য (২০)। পীরগঞ্জ থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র এলাকায় সহিংসতায় আহত হন ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন সজিব। বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে চাঁদপুরে অ্যাম্বুল্যান্সে তিনি মারা যান।

ভোট শুরুর আগে খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক বাবুল শিকদারের মৃত্যু হয়েছে। ভোটের প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে হাতুড়িপেটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

চতুর্থ ধাপে সিলেটের গোলাপগঞ্জে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বৈটিকর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষে আব্দুস সালাম (৪০) নামের এক সাইকেল মেকানিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি লক্ষ্মীপাশা ইউপির রামপা দক্ষিণ ভাগ এলাকার বাসিন্দা।

ঠাকুরগাঁওয়ে ইউপি নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধ এবং এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে হামিদুল ইসলাম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। হামিদুল ইসলাম রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের মৃত তছির উদ্দীনের ছেলে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল খালেক (৪৫) নামে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে।