হারিয়ে যাচ্ছে শীতে খেজুর রসের ঐতিহ্য

নুরউদ্দীন খান সাগর, চট্টগ্রাম প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১, ০৮:২৬ এএম

খেজুরগাছ, শীতের সঙ্গে রয়েছে যার নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে খেজুরগাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস, গুড়। ফল হিসেবেও খেজুরের জুড়ি নেই।

শীতের মিষ্টি রোদে খেজুরের গুড় দিয়ে মুড়ি খেতে কে না ভালোবাসে? শীত মৌসুমে একসময়ে গ্রামবাংলার প্রতি ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে ফিন্নি, পায়েস, রসের গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা এবং গাঢ় রস তৈরি করে মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহা উৎসব চলত। কিন্তু আগের মতো রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুরগাছ আর দেখা যায় না চট্টগ্রামের উপজেলার গ্রামগুলোতে। 

গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুরগাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ ও খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো কিছু কিছু বাড়ির উঠোনের আশপাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু খেজুরগাছ। আর রস আহরণে এখনো গ্রাম্য রীতিতেই ঝুঁকি নিয়েই কোমরে রশি বেঁধে শীতের বিকেলে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বেঁধে তা থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। আগে তারা এই কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটবাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। 

একসময়ের গাছি রহিম বলেন, “রাস্তাগুলো সংস্কার হওয়ার কারণে খেজুরগাছ কেটে ফেলা হলেও নতুন করে আর কেউ গাছ লাগাচ্ছে না। বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ কেটে ফেলা হচ্ছে তাতে একসময় হয়তো আমাদের এলাকায় খেজুরগাছ দেখাই যাবে না।” 

স্কুলশিক্ষক ফজলুল করিম বলেন, “খেজুরগাছ একদিকে গ্রামের শোভা বর্ধন করে, অন্যদিকে মুখরোচক খাবার রসও পাওয়া যায়। এখনই যদি খেজুরগাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন করে গাছ রোপণ করা না হয়, তাহলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে খেজুরগাছ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরগাছ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। কারণ নতুন করে খেজুরগাছ রোপণে মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না। তালগাছ রোপণের মতো খেজুরগাছ রোপণে সরকারি-বেসরকারি প্রচারণা থাকলে খেজুরগাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেত, না হলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর গাছের রস, হারিয়ে যাবে গ্রামবাংলার আরও একটি ঐতিহ্য।” 

কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুরগাছের রস। শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকেন গাছিরা। গাছিদের খেজুরগাছ কাটার কাজটি একধরনের শিল্প। এর জন্য দরকার হয় বিশেষ দক্ষতা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য। খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন রকমের গুড় তৈরি করে থাকেন গাছিরা। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্য। এটি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”